সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শীতে জেঁকে বসেছে নিউমোনিয়া

► হাসপাতালে রোগীর লাইন ► সর্বোচ্চ শিশু মৃত্যুর একক সংক্রামক ► টিকা নিলেও সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

শামীম আহমেদ

শীত আসতেই জেঁকে বসেছে সংক্রামক রোগ নিউমোনিয়া। টিকা নেওয়ার পরেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকে টিকাই নেননি। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে নবজাতক শিশু। জন্মের পরই ঠান্ডাজনিত রোগ জেঁকে ধরছে, যা পরবর্তীতে নিউমোনিয়ায় রূপ নিচ্ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আমাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরেজমিন পরিদর্শনের পাশাপাশি রোগীর স্বজন, সিভিল সার্জন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে শিশুদের নিউমোনিয়া টিকা দেওয়া হয়। তবুও রোগটিকে ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী শিশুমৃত্যুর একক বৃহত্তম কারণ নিউমোনিয়া। ২০১৯ সালে রোগটিতে ৫ বছরের কম বয়সী ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৮০টি শিশুর মৃত্যু হয়, যা এই বয়সী শিশুমৃত্যুর ১৪ ভাগ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। দূষিত বায়ুও নিউমোনিয়া সংক্রমণের জন্য দায়ী।

ঢাকার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা বিশ্বে পাঁচ মাসের কম বয়সী সর্বাধিক শিশুর মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ায়। নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষার সবথেকে কার্যকরী উপায় হলো টিকা দেওয়া। তবে কোনো টিকাই শতভাগ রোগ প্রতিরোধ করে না। টিকা রোগটি হওয়ার ঝুঁকি কমায়, দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। তাই টিকা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে টিকা নিলেও নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। শীতে শিশু, বৃদ্ধ বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরকে বিশেষ যতেœ রাখতে হবে। ঠান্ডা লাগতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। যেসব শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদেরকে প্রতি বছরই ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার ভালো উপায়। এছাড়া যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ খায় না বা কম পায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে; তাদের নিউমোনিয়া হবার ঝুঁকি বেশি। দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে আক্রান্তদের নিউমোনিয়া হলে তাদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এজন্য পরিবারের সদস্যদের সচেতন থাকতে হবে। কুড়িগ্রাম জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে চারজন নিউমোনিয়ার রোগী ভর্তি হয়। তখন ১২টি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিল। কাউকেই নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হয়নি। অধিকাংশের নিউমোনিয়া টিকা দেওয়ার বয়স (৬ সপ্তাহ) হয়নি। এর মধ্যে ছিল সদরের লক্ষীকান্ত এলাকার আছিয়া বেগের কন্যা আছমা (এক মাস), রাজারহাট উপজেলার বাবু ইসলামের পুত্র কিয়াম ইসলাম (দুই মাস), সদরের কুমরপুরের এরশাদুলের পুত্র রাইয়ান (তিন মাস), লিপিকা রানী (দেড় মাস)। আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদরের ঘোগাদহ এলাকার নাজিফার বয়স ছয় বছর হলেও নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হয়নি বলে জানান তার পিতা নুরুন্নবী। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত সপ্তাহে ঠান্ডায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ১২ জন। অধিকাংশই শিশু। সব শিশুর টিকা দেওয়া ছিল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত সপ্তাহে ৭৮২ জন শীতজনিত রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ৩৩৯ জন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৪৩ জন। বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক। গত শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে ১২টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ৫১ জন। এরমধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ছিল ছয় জন। দামুড়হুদা উপজেলার কেশবপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের চার মাস বয়সী মেয়ে খাদিজা আক্তার নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। শিশুটির স্বজনরা জানান, জন্মের পর থেকে সব টিকা দেওয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার মোহাম্মদ আকাশের ২০ দিন বয়সী মেয়ে আরোয়া খাতুন গত ১৩ জানুয়ারি নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। বয়স কম হওয়ায় তাকে এখনো টিকা দেওয়া হয়নি বলে জানান শিশুর মা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট ডা. আসাদুর রহমান মালিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকে ঠান্ডা-কাশি ও রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতের এ মৌসুমে শিশুদের বিশেষ যতেœ রাখতে হবে। সবসময় গরম কাপড় পরাতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন শিশুরা ঘেমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর