সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্রহ্মপুত্র নদ গিলে ফেলছে প্রভাবশালীরা!

শেরপুর প্রতিনিধি

ব্রহ্মপুত্র নদ গিলে ফেলছে প্রভাবশালীরা!

আস্ত ব্রহ্মপুত্র ধীরে ধীরে গিলে ফেলছে প্রভাবশালী চক্র। শেরপুর-জামালপুর সীমান্তে চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু সংলগ্ন নদী ভরাট করে বিশাল স্থাপনা করা হয়েছে অনেক আগেই। সম্প্রতি ওই স্থাপনা অঞ্চল পাড় হয়ে সেতুর উত্তর নদী অংশের বিশাল এলাকায় হাজার হাজার ট্রাক দিয়ে বালু ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বাণিজ্যিক মার্কেট। এতে করে নদীর মধ্য ভাগ এখন মার্কেটের মালিকানাধীন। দখলবাজরা আর ১৫-২০ গজ দখল করতে পারলেই নদীর মৃত্যু ঘটবে। স্থানীয়রা বলছেন, নদী দখল করে দোকানপাট নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রভাবশালী চক্র। তার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যন আকবর আলী ও তার স্বজনরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণেই চোখের সামনে নদী গিলে ফেলা হচ্ছে। নদী ও নদীর বালু দখলের এই সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন চেয়ারম্যানের ছেলে ও ভাইয়েরা। নদীর ৯৯ একর জমির বালুমহালের ইজারাও নিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা। এর ফলে নদী ও নদীর আশপাশে একচ্ছত্র আধিপত্য চলে এসেছে চেয়ারম্যানের হাতে। নদীর চরে জায়গা নেওয়া গরিব মানুষেরা জানিয়েছেন, নদীর বুকে চর জাগা জায়গাগুলোতে গরিব মানুষ আবাদ করেন। আর চেয়ারম্যানের ইচ্ছা হলেই ওই আবাদি জমি কেটে বালু ভরাট করে যান। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার কেউ নেই। কাউকে বিচার দিলে কিছুই হয় না। উল্টো চেয়ারম্যানের মামলা-হামলায় এলাকা ছাড়া হতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্থাপনা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের সেতু। এই সেতুর উত্তর পাশের মাথা থেকে সেতুর প্রায় অর্ধেক অংশ নদীর জমি দখল করে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর বিশাল অংশ এখন প্রভাবশালীদের দখলে। দেখা গেছে, সরকার বিপুল টাকা ব্যয় করে নদী খনন করছে, আর সেই খনন করা বালু ও ইজারার বৈধ-অবৈধ বালু দিয়ে নদী ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করে জমজমাট বাণিজ্য চলছে। অনেক আগেই নতুন এ মার্কেটের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল অট্টালিকা। ওই অট্টালিকায় চেয়ারম্যান নিজেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আর নতুন মার্কেটে ৩৭টি বিশাল বিশাল ঘর করা হয়েছে। এই ঘরগুলোর প্রতিটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত ও মাসিক সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন। এদিকে চেয়ারম্যান আকবর আলীর দাবি, তিনি নদী দখল করেননি। সব সম্পদ তার পূর্বপুরুষের নামে রেকর্ড পর্চা আছে। তার জায়গাতেই তিনি স্থাপনা করেছেন। কোনোরকম ক্ষমতা খাটানো হয়নি। তার শত্রুরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথের (সওজ) দাবি, সেতু করার সময় নদী ও স্থাপনার ভারসাম্য রক্ষায় সরকার সেতুর শুরু ও শেষের দুই দিকের ডান বাম পাশের ১০০ ফুট করে নদীর জায়গার নিরঙ্কুশ অধিকার সরকার সওজকে লিখিতভাবে দিয়েছে। কিন্তু সেতুর উত্তর পাশের এক ইঞ্চি জায়গাও আর খালি নেই। সওজ অবৈধ দখলমুক্ত করতে চাইলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘দখলের ফলে নদী ও সেতুর ভারসাম্য ব্যাপকভাবে নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বড়সড় অভিযান পরিচালনা করতে সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হবে।’ শেরপুর জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, ‘নতুন যোগদান করেছি। আগে কী হয়েছে জানি না। এই এলাকার জনস্বার্থ রক্ষা করতে সরকার জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছে। কে কত ক্ষমতাবান সেটা দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখে আইনি ব্যবস্থা অতিসত্তর নেওয়া হবে। জনস্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে এই চেয়ারে থাকব না। সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির কোনো সুযোগ নেই।’

সর্বশেষ খবর