মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পোশাকনির্ভরতা হুমকি রপ্তানিতে

রাশেদ হোসাইন

পোশাকনির্ভরতা হুমকি রপ্তানিতে

দেশের রপ্তানি আয় তিন-চার দশকের বেশি সময় ধরে পোশাক খাতনির্ভর। রপ্তানি আয়ের উত্থান-পতন নির্ভর করে এ খাতের ওপর। একটি মাত্র পণ্য থেকেই রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে বলে এই ঝুঁঁকি তৈরি হয়েছে। তাই এই পণ্যের বাজারে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হলে রপ্তানি আয় নিয়েও বাড়ে দুশ্চিন্তা। সম্প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরির প্রেক্ষাপটে বিষয়টি সামনে এসেছে। রপ্তানির ঝুঁকি কমাতে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা ও নতুন বাজার খোঁজার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে আগের অর্থবছর ২০২২-২৩ সালের (জুলাই-ডিসেম্বর) তুলনায় ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে গেছে। তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপের বাজারে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ, আমেরিকায় ৫ দশমিক ৬৯ এবং কানাডায় ৪ দশমকি ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩-২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন এবং ৭৪১ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দেশের মোট পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক ছিল মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে মোট রপ্তানিতে পোশাকের হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি বাড়ার পেছনে আছে শুল্কমুক্ত সুবিধা। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে জিএসপি সুবিধা হারাবে ২০২৯ সাল থেকে। তাতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্য একটি খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। অন্যান্য খাতের ওপর আমাদের নজর দিতে হবে। রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর, শিপিং, লেদার, জুটসহ আমাদের অন্যান্য সেক্টরে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য সেক্টরে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের ওপর নির্ভরতা কমনো উচিত। রপ্তানিতে পোশাকনির্ভরতা কমাতে সরকারেরও কোনো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। রপ্তানির ক্ষেত্রে পোশাক খাত যত সুবিধা পায়, অন্য খাতগুলো সেই ধরনের সুবিধা পায় না। ফলে, অন্যান্য খাতের রপ্তানিকারকেরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। তাই রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতের দিকে সরকারকে সুদৃষ্টি দিতে হবে। স্বাধীনতার পর পাট ও পাটজাত দ্রব্য ছিল বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পাটের পর ছিল চা ও হিমায়িত খাদ্য। বর্তমানে এই চারটি পণ্যে দিন দিন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তৈরি পোশাকের পর হোম টেক্সটাইল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্রকৌশল পণ্য ভালো করলেও রপ্তানির গতি খুবই কম। এক সময় কৃষিজাত পণ্য আশা জাগালেও ইতিবাচক ধারায় নেই কয়েক বছর ধরে। এখন বলা যায়, পুরো রপ্তানি খাতই দিন দিন তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পোশাক রপ্তানি বাড়লে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় থাকে। তা না হলে ধস নামে রপ্তানি আয়ে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর