মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
নবজাতক বিক্রি

মায়ের জবানবন্দি হাসপাতাল সিলগালা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুর নগরীতে সন্তান প্রসবের পর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোরপূর্বক নবজাতক বিক্রির ঘটনায় সেই হাসপাতাল সিলগালা করে দিয়েছে সিভিল সার্জন। অনুমোদন ছাড়াই ওই ক্লিনিক এতদিন অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। এদিকে গতকাল দুপুরে  নবজাতকের মা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মা লাবণী কীভাবে তার সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে তার বর্ণনা দেন। আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলম সব কিছু শোনার পর নবজাতককে মায়ের জিম্মায় দেন। আদালত থেকে মা নবজাতককে নিয়ে নগরীর পাঠানপাড়া ভাড়া বাসায় ওঠেন।

জানা গেছে, রংপুর নগরীর বুড়ারঘাট এলাকার ওয়াসিম আকরামের স্ত্রী লাবণী (২২) গত ১৩ জানুয়ারি প্রসব বেদনা নিয়ে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই রাতে সিজারের মাধ্যমে তিনি একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। এর তিন দিন পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাবণী ও তার স্বামীকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। ওয়াসিম ও লাবণী দম্পতির অসচ্ছলতাকে পুঁজি করে ক্লিনিকের পরিচালক এমএস রহমান রনি তার পূর্ব পরিচিত জেরিনা আক্তার বীথি ও তার স্বামী রুবেল হোসেন রতনের কাছে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতককে বিক্রি করে দেন। এতে সহযোগিতা করে লাবণীর স্বামী ওয়াসিম। এ ঘটনায় দিশাহারা লাবণী মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ রবিবার নগরীর পীরজাবাদ এলাকা থেকে নবজাতককে উদ্ধারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে।  গ্রেফতাররা হলেন, রংপুর নগরীর বাবুখাঁ কামারপাড়ার নজির উদ্দিন সরকারের ছেলে হলিক্রিসেন্ট ক্লিনিকের পরিচালক পল্লী চিকিৎসক এমএস রহমান রনি (৫৮), পীরজাবাদ এলাকার সামসুল ইসলামের ছেলে রুবেল হোসেন রতন (৩০) ও রতনের স্ত্রী জেরিনা আক্তার বীথি (৩০)। ভুক্তভোগী লাবণী বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে পল্লী চিকিৎসক রনি টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করেছিলেন।  ডেলিভারির পর তিনি বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেন। আমার স্বামী দুই দিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হয়নি। এরপর আমার স্বামী তার কিডনি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। আমি আমার রক্ত বিক্রি করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে চেয়েছি। আকুতি-মিনতি সত্ত্বেও তারা আমার স্বামীকে ম্যানেজ করে নবজাতক ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছিল। জেলা সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের কোনো লাইসেন্স ছিল না। অবৈধভাবে হাসপাতালটি চলছিল। সোমবার সকালে হাসপাতালটি বন্ধ করে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার এসআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মজনু মিয়া বলেন, আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের বিচারক জবানবন্দি শেষে নবজাতককে মায়ের জিম্মায় দেন। গ্রেফতার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর