বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সারা দেশে বিএনপির হালচাল

মামলায় জর্জরিত সবাই

সিলেট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সরকার পতনের আন্দোলন করতে গিয়ে মামলার বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একের পর এক মামলার আসামি হয়ে দলের অনেক নেতা-কর্মী গা ঢাকা দিয়ে আছেন। রাজপথের অনেক ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা গ্রেফতার হয়ে কারান্তরিন। এখন পর্যন্ত ৬৮ মামলায় কয়েক হাজার নেতা-কর্মী হয়েছেন আসামি। বিএনপি নেতাদের চেয়ে অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই বেশি টানছেন মামলার ঘানি। দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী হয়েছেন কারান্তরিন। নেতা-কর্মীদের ফেরারি জীবন ও কারাবাসে সিলেট বিএনপির রাজপথের শক্তি অনেকটা কমে গেছে। মামলা পরিচালনায় দলের পক্ষ থেকে ‘ধাইনি সহায়তা সেল’ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আন্দোলন করতে গিয়ে সিলেট বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী বিভিন্ন মামলায় আসামি হন। পুরনো ওই মামলায় এখনো নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের। ইতোমধ্যে কোনো কোনো নেতা-কর্মীর সাজাও হয়ে গেছে। কোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষের দিকে। পুরনো মামলা শেষ হতে না হতেই চলমান আন্দোলন করতে গিয়ে নতুন মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করতে গিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট মহানগরীর কোতোয়ালি থানায় ১৫টি, মোগলাবাজারে ১০, দক্ষিণ সুরমায় ৯, এয়ারপোর্টে ৬, জালালাবাদে ৬, শাহপরানে ৩টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া গোলাপগঞ্জে ৩, বিশ্বনাথে ২, ওসমানীনগরে ২, গোয়াইনঘাটে ৩, জৈন্তাপুরে ৩, কোম্পানীগঞ্জে ২ ও কানাইঘাটে ১টি মামলা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। গাড়ি ভাঙচুর, নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের দিন সিলেটে প্রথম মামলা হয় সিলেটের জকিগঞ্জ থানায়। ঢাকার মহাসমাবেশে সংঘর্ষের প্রতিবাদে ওই রাতেই কালিগঞ্জ বাজারে মিছিল বের করেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। ওই মিছিল থেকে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরদিন হরতাল চলাকালে মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকীকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ধরপাকড়। বর্তমানে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা যুবদলের সভাপতি মুমিনুল ইসলাম মুমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সদস্যসচিব আফসর খান, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসানসহ ৩০০ নেতা-কর্মী কারাবন্দি রয়েছেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০টি মামলা হয়েছে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসানের ওপর। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনারের বিরুদ্ধে ১৪ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আফসর খানের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের দিন পুলিশ হত্যার ঘটনায় সিলেটের তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন-সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ও জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু। মামলা প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানান, নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে দল। এই আইনি সহায়তা সেল মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের সাহস ও মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা দিয়ে ও গ্রেফতার করে সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিতে অতীতের মতো সিলেট বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী রাজপথে সক্রিয় রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর