বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত

বেনাপোল প্রতিনিধি

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন নিহত হয়েছেন। গত সোমবার ভোরে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে এ ঘটনার পর উত্তেজনা বিরাজ করছে। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন সীমান্তবাসী। বিজিবি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএসএফের গুলিতে সিপাহি নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘটনার পর বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন    করেছেন। বিজিবি এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে। নিহত সিপাহি রইশুদ্দীন ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির বেনাপোল সীমান্তের ধান্যখোলা বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ঘটনার পর তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৪টার দিকে ভারত থেকে সীমান্ত পথে গরু নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালায় পাচারকারীরা। এ সময় বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীন গতিরোধ করার চেষ্টা করলে চোরাকারবারিরা গরু ফেলে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ভারতের সুটিয়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ৭ রাউন্ড গুলি চালালে দুই চোরাকারবারি ভারতীয় অংশে আহত হন। এরপর বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়া গরুগুলো বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করতে গেলে বিএসএফ রইশুদ্দীন নামে এক বিজিবি সদস্যকে গুলি করে। আহত বিজিবি সদস্যকে ভারতের সুটিয়া ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে গুলিবিদ্ধ বিজিবি সদস্যকে ভারতের বনগার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিজিবির যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিদের সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে দায়িত্বরত বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয়। তখন জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক মোহাম্মদ রইশুদ্দীন মারা গেছেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফকে বিষয়টির ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি ও কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া লাশ বাংলাদেশে দ্রুত ফেরত আনার বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

রইশুদ্দীনের বাড়িতে শোকের মাতম : গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের দেশের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর শ্যামপুর গ্রামে চলছে শোকের মাতম। স্বামীর মৃত্যুর খবরে স্ত্রী নাসরিন খাতুন চার মাস ও তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে বিলাপ করছেন। স্বামী শোকে পাগলপ্রায় স্ত্রী পথ চেয়ে বসে আছেন কখন আসবে স্বামীর লাশ। অবুঝ দুই শিশুকে কোলে নিয়ে মাঝে মধ্যে ডুকরে কেঁদে উঠছেন নাসরিন খাতুন এবং আর চাইছেন স্বামী হত্যার বিচার। স্ত্রী নাসরিন বেগম বলেন, বিয়ের অল্প সময়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে আমাকে বিধবা হতে হলো। সন্তানদের কী বুঝ দেব আমি! আর আমিই বা কীভাবে দুই সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করব। বিলাপ করতে করতে তিনি কঠোর বিচার দাবি করছেন। তিনি বলেন, দায়িত্বে যাওয়ার সময় মুঠোফোনে সবশেষ একবার কথা হয়েছে। কিন্তু আর কোনোদিন কথা হবে না। অন্যদিকে রইশুদ্দীনের বাবা কমরজান ও তার বৃদ্ধা মাও ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না রইশুদ্দীনের আত্মীয়স্বজন। তাদের সান্ত্বনা দিতে এসে পাড়া-প্রতিবেশীরাও শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ছেন। রইশুদ্দীনের মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জুনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সৈনিক পদে যোগ দেন রইশুদ্দীন। তিনি যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ধ্যানখোলা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর