বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শৈত্যপ্রবাহ কিছুটা কমলেও যাচ্ছে না তীব্র শীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

শৈত্যপ্রবাহ কিছুটা কমে গেলেও সহসাই কমছে না শীতের তীব্রতা। গতকালও ১১ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গত মঙ্গলবার ২৬ জেলায় ছিল শৈত্যপ্রবাহ। টানা শৈত্যপ্রবাহে সারা দেশেই বিরাজ করেছে ঠান্ডা পরিস্থিতি। কষ্টে আছেন দেশের মানুষ। সবচেয়ে কষ্টে আছেন ভাসমান মানুষেরা।

আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করেছে। অব্যাহত আছে ঘন কুয়াশা। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির পর গতকাল কিছুটা বেড়ে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে আসে। প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছুটা উষ্ণতা পাওয়া গেলেও বিকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও কমতে থাকে দিনের তাপমাত্রা। রাতের তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। সঙ্গে ঘন কুয়াশা বেলা করে পড়তে থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেশের উত্তরে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছিল। এরপর প্রায় নিয়মিতই দেশে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। টানা এমন শৈত্যপ্রবাহকে ‘অস্বাভাবিক’ না বললেও একে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন’ এর প্রভাব হিসেবেই চিহ্নিত করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাওহিদা রশিদ। তবে সহসাই এমন শীত-কুয়াশা কমছে না বলে জানিয়েছেন দেশের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাস শীতের মাস। বর্তমানে এই শীত প্রলম্বিত হচ্ছে। শীতের এই চেহারা এবার জানুয়ারি পার করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই প্রলম্বিত শীতের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। আপাতত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সহসা শীত-কুয়াশা কমছে না।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : জেলায় গতকাল সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে জেলার এ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ দিন ধরে বন্ধ। প্রচণ্ড শীতে উত্তরের এ জনপদে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে নদনদীর চরাঞ্চলের মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে অনেক কৃষিজমি প্রস্তুতসহ বীজতলা থেকে বীজ এনে তা লাগাতে দেরি হচ্ছে।

নাটোর : তীব্র শীত ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে গত দুই দিন নাটোরের সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলেছে জেলার সব বিদ্যালয়। বিদ্যালয় খুললেও এদিন সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা কম দেখা যায়।

নীলফামারী : জেলায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। শীতের তীব্রতার কারণে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার সব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের পাঠদান কার্যক্রম। তীব্র শীতের কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের।

দিনাজপুর : গতকাল দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতের কারণে জেলায় গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরাও। জেলার ট্রাক চালক উদয় মিয়া বলেন, ফুলবাড়ি থেকে দিনাজপুর যাচ্ছি। ১ ঘণ্টায় দিনাজপুর শহরে পৌঁছার কথা থাকলেও ঘন কুয়াশার কারণে দেড় ঘণ্টা হয়ে গেলেও এখনো পৌঁছাতে পারিনি। রাস্তা দেখা যাচ্ছে না তাই ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল করতে হচ্ছে। কৃষক মিরাজ সরকার বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে আলুর গাছ মরে যাচ্ছে ও রসুনের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক স্প্রে করেও লাভ হচ্ছে না। এবার ঠান্ডা বেশি এবং দিনের বেশির ভাগ সময় দেখা মিলছে না সূর্যের। গতবারের তুলনায় এবার আলু ও রসুনের ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : গতকাল সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বেলা বাড়লেও দেখা মিলছে না সূর্যের। কুয়াশার ঘনত্ব কিছুটা কমলেও আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন সাগরপাড়ের মানুষ। কলাপাড়ায় সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

বরিশাল : বরিশালে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন। তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না জনসাধারণ। যদিও তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজে যেতে হয়েছে দিনমজুর ও কর্মজীবী মানুষের।

সর্বশেষ খবর