শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরবঙ্গ

সকালে স্কুল খুলে আবার বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরবঙ্গ

নওগাঁ জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, যা আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও সামান্য কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা। আগামীকাল রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা কোথাও কোথাও থাকতে পারে দুপুর পর্যন্ত। বিঘ্ন ঘটতে পারে বিমান, সড়ক ও নৌ চলাচলে। গতকাল আবহাওয়া অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল রংপুর বিভাগের সবগুলো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। রাজশাহী বিভাগেও তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির আশপাশে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় কষ্টে আছে উত্তরের জনপদের মানুষ। চরম বিপাকে দিনমজুর, কৃষক, পরিবহন শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ। এদিকে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় স্কুল খুলতে দেখা যায়। পরে জেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা এলে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনার পর থেকেই এ নিয়ে লুকোচুরি চলছে। ভোরে কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে শিশুরা স্কুলে আসছে। পরে ছুটি দেওয়া হচ্ছে। ততক্ষণে তাপমাত্রা অনেকটাই বাড়ছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীত তুলনামূলক কম ছিল বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে।

আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের পরিস্থিতি-

দিনাজপুর : কনকনে ঠান্ডা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতে কাঁপছে মানুষ। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। কুয়াশার কারণে গতকাল অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলেছে দূরপাল্লার যানবাহন। দুপুরের পর সূর্যের দেখা মিললেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতের অনুভূতি কমেনি। বিকালের পর শীতের তীব্রতা আরও বাড়ে। এদিকে মাধ্যমিক স্কুল খোলা নাকি বন্ধ, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় সকালে অনেক স্কুল খোলা রাখতে দেখা যায়। পরে অবশ্য জেলা শিক্ষা অফিস ঘোষণা দিলে স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে মঙ্গল ও বুধবার স্কুল ছুটি দিয়েছিলাম। বুধবার তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা আবার কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার আবারও স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নশরতপুরের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীত বেশি হওয়ায় বীজতলাসহ আলুর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বাজার থেকে দামি কীটনাশক এনে স্প্রে করেও ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আলুর গাছ আর বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বিরামপুরের কাটলা ইউপির দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ঠান্ডার কারণে আয় অনেক কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। জানুয়ারি মাসজুড়েই তাপমাত্রা এরকম থাকতে পারে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

কুড়িগ্রাম : গতকাল সকাল ৬টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পরে তা কমে সকাল ৯টায় দাঁড়ায় ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে গতকালও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। এ নিয়ে জেলার স্কুলগুলো ছয় দিন ধরে বন্ধ। এদিকে প্র্রচণ্ড ঠান্ডায় ঝুঁকিতে পড়েছে বোরো আবাদ। জেলার ৯ উপজেলার অনেক এলাকায় দীর্ঘ ছয় দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। লেট ব্লাইট রোগের আক্রমণে আলু গাছের গোড়ায় পচন ধরতে শুরু করেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছি। এদিকে, নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া অনেক মানুষ প্রচণ্ড কুয়াশা ও শীতকে উপেক্ষা করে জমিতে কাজে যাচ্ছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত রোগে।

শীতার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ জানান, ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ৬৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শিশুদের জন্য আলাদা শীতের কাপড়সহ শুকনো খাবারও দেওয়া হয়েছে। বেসরকারিভাবেও অনেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। সম্প্রতি চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচিত এমপিদের বরাদ্দ চার হাজার কম্বল এসেছে। সেগুলো এমপিদের নির্দেশনা মোতাবেক বণ্টন করা হবে।

সর্বশেষ খবর