শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

শীতে কাঁপছে উত্তরবঙ্গ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সূর্যের দেখা মিলছে না সারা দিনে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০-এর মধ্যে ওঠানামা করলেও গতকাল সকালে তা নেমে আসে ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা চলতি মৌসুমের সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গত বছর তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ১৪ জানুয়ারি ৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাড়কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরের জনজীবন। শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কাজে বের হতে না পারায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার হচ্ছে হতদরিদ্রদের।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। রংপুর বিভাগের সবগুলো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৯ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তেঁতুলিয়ায় ছিল ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত। তবে একটি এলাকায় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রির নিচে নামায় একে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ঘোষণা করেনি আবহাওয়া অধিদফতর। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরেও। কুড়িগ্রামে গতকাল সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, আর দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ৭.২ ডিগ্রি। ঢাকায় আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ জানুয়ারি ৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ থেকে ২১ জানুয়ারি তাপমাত্রা ছিল ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে। এবার গতবারের রেকর্ড ভেঙেছে শীত। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় কয়েকদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চললেও তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামায় তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়েছে। এমন তাপমাত্রা থাকতে পারে আগামী আরও দুই-এক দিন। এদিকে কম তাপমাত্রার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরের এই জেলাগুলোর জনজীবন। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন শীতের পরিস্থিতি-

নীলফামারী : শৈত্যপ্রবাহে কাবু হয়ে পড়েছে নীলফামারীর মানুষ। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সূর্যের দেখা মিলছে না দুপুর পর্যন্ত। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশিসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মনিরা বেগম বলেন, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। ঠাণ্ডাজনিত কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

কুড়িগ্রাম : মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জেলাজুড়ে। শীতের প্রভাবে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলার ছিন্নমূল ও খেটেখাওয়া শ্রমিক শ্রেণির লোকজন রয়েছেন বিপাকে। শীতের প্রকোপে জেলার জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা শীতজনিত রোগী। অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় শীতকষ্টে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষজন। নদীপাড়ে হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছেন এখানকার মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

রংপুর : চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন ৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। এর আগের দিন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। রাস্তায় যানবাহন চলাচল কমে গেছে। শীতজনিত রোগবালাই বেড়েছে। এমন আবহাওয়া আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান।

লালমনিরহাট : চলতি শীত মৌসুমের জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। প্রবল শীতে কাঁপছে এ অঞ্চলের জনপদ। সপ্তাহজুড়ে লালমনিরহাটে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। নিম্ন আয়ের মানুষজনের শীতবস্ত্রের অভাবে ভোগান্তি বেড়েছে। অনেকে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে জেলায় দুজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আরও কয়েকজন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানিয়েছেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ৫ হাজার কম্বল জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিতরণ করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের বরাবর ১ হাজার করে মোট ৩ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জেলা পরিষদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেও শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে।

দিনাজপুর : এই জেলায় এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে ৭.২ ডিগ্রিতে নেমে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ। বেলা ১২টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও ছিল না উত্তাপ। ফলে কমেনি শীত। বিকালের পর আবারও শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। হাকিমপুরের মাধবপাড়ার কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, ঠান্ডায় কাজ করা খুবই কষ্ট। আয়-রোজগার কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রামনগরে কাজের সন্ধানে আসা জুয়েল মিয়া বলেন, গরিব মানুষের কষ্ট কেউ দেখে না। কাম করিবা গেইলে হাতগুলা কোঁকড়া নাগি যাছে। তাও কাম করিবার লাগে। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জানুয়ারি মাসজুড়েই জেলায় তাপমাত্রা এমন থাকতে পারে।

নওগাঁ : ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল বাতাস আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নওগাঁর জনজীবন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিস জেলায় সর্বনিম্ন ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে; যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলছে। প্রচণ্ড শীতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, চলতি মাসের শেষের দিকে আরও একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর