সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
শেষ নেই মাদক ভয়াবহতার

গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে কোকেন পাচারে নাইজেরিয়ান চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে ভয়ংকর মাদক কোকেনের ব্যবসা চলছিল। বাংলাদেশে কোকেন নিয়ে এসে পাচার হচ্ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। রাজধানীতে পৃথকভাবে দুই আফ্রিকান নাগরিকের কাছ থেকে সাড়ে আট কেজি কোকেন জব্দের ঘটনায় দেশি-বিদেশি আরও পাঁচজনকে বারিধারা এবং ভাটারা থেকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।

তারা হলেন চক্রের মূলহোতা নাইজেরিয়ার ডন ফ্রাঙ্কির ম্যানেজার বাংলাদেশের আসাদুজ্জামান আপেল (২৭), তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম রনি (৩৪), ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েঙ্গে এবং নাইজেরিয়ার ননসো ইকজিমা পিটার ওরফে অস্কার (৩৪) ও নাডুলে এবুকে স্ট্যানলি ওরফে পোডস্কি (৩১)। ডিএনসি কর্মকর্তারা বলছেন, মূল হোতা ডন ফ্রাঙ্কি নয় মাস আগে দেশ ত্যাগ করেছেন। গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম রনি ও একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।

গতকাল পুরো বিষয়টি সাংবাদিকদের অবগত করতে তেজগাঁওয়ের ডিএনসির মেট্রো কার্যালয়ে হাজির হন উপমহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। তিনি বলেন, এ চক্রের হোতা ডন ফ্রাঙ্কির মূল নাম জ্যাকব ফ্রাঙ্কি। তিনি ‘বিগ বস’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্টও তিনি। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করেছেন নয় বছর ধরে। তবে নয় মাস আগেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। এখন নাইজেরিয়ায় বসেই বিভিন্ন দেশের মাদক বহনকারীদের সমন্বয় করছেন। বাংলাদেশে তার অফিসের দায়িত্বে ছিলেন তার ভাই উইসলি। তিনি আরও বলেন, যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীদের মালপত্রের মধ্যে মাদক পাচার করে আসছিল এই চক্রটি। ঢাকার বারিধারা এবং ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গত বুধবার আফ্রিকার দেশ মালাউইর নাগরিক নোমথানডাজো তোয়েরা সোকো (৩৫) নামের এক নারীকে আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেফতার করা হয় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে অভিযান চলাকালে আর্মড পুলিশের একটি কুকুর তানজানিয়ার নাগরিক মোহাম্মদী আলী মোহাম্মদের কাছে মাদক শনাক্ত করে। পরে তাকে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেফতার করা হয়। মহাপরিচালক ফারুকী বলেন, জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদক বিষয়ক কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) ‘গ্লোবাল কোকেন রিপোর্ট-২০২৩’-এ বলা হচ্ছে, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে মাদক পাচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নাইজেরিয়ার কিছু চক্র। বৈশ্বিকভাবেও নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত লোকদের মাধ্যমে তারা মাদক পাচার চক্রের বিস্তার ঘটিয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ব্রাজিলের বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের ব্যাগে মাদক নিয়ে গ্রেফতার বিদেশিদের মধ্যে নাইজেরিয়ানদের সংখ্যা বেশি।

যেভাবে গ্রেফতার ও সংশ্লিষ্টতা : ডিএনসি বলছে, গ্রেফতার কেলভিন ইয়েংগি (৪২) ২০ জানুয়ারি তানজানিয়ার নাগরিক মোহাম্মদী আলী মোহাম্মদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসে। কোকেনের চালান বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছানোর সমন্বয়কারী হলেন কেলভিন। গত বুধবার কোকেনের চালানটি জব্দ হওয়ার খবর পাওয়ার পরই তিনি দেশ ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে আগেই ডিএনসির কাছে গ্রেফতার হলেন তিনি।

গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম রনি কোকেন পাচারের মূল হোতা ডন ফ্রাংকির বাংলাদেশি সমন্বয়কারী। তাকে ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রনি একটি অ্যাগ্রো মেশিনারিজ কোম্পানির পরিচালক। সঙ্গে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং ফ্রাংকির সঙ্গে গত দুই বছর ধরে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তার কাজ ছিল মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ইনভাইটেশন, হোটেল রির্জাভেশন ও ভিসা প্রাপ্তির কার্যক্রম তদারকি করা। রনি ‘মাসপেক্স লি.’ নামের একটি অস্তিত্বহীন কোম্পানির ভুয়া ইনভাইটেশন লেটার তৈরি করে ফ্রাংকির কাছে পাঠাত।

ডিএনসি সূত্র বলছে, রনির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ডন ফ্রাংকির বারিধারার অফিসের ঠিকানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে অভিযান চালিয়ে কোকেন চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ল্যাগেজ ও ৭০ গ্রাম কুশ পাওয়া যায়। ফ্রাংকি নয় মাস আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তার অবর্তমানে ফ্রাংকির ভাই উইসলি এবং ফ্রাংকির ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল ব্যবসা দেখাশোনা করছিলেন। তবে কোকেন চালান আটকের খবর পেয়েই উইসলি দুই দিন আগে দেশত্যাগ করেন। তবে আপেলকে বারিধারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

ডিএনসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদেই আপেল জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কোকেনের চালান প্রবেশের পরে পুনঃপ্যাকেজিং, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তার দায়িত্ব ছিল তার। তার দেওয়া তথ্যানুসারে ভাটারা এলাকা থেকে নাইজেরিয়ান নাগরিক অস্কার ওরফে ননসো ইকজিমা পিটার (৩৪) এবং এনডুলে ইবুকা স্ট্যানলি ওরফে পোডস্কিকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে কোকেন ট্রানজিটের কাজটি অস্কার এবং পোডস্কি মিলে করতেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর