সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

তাপমাত্রা নেমেছে ৫ ডিগ্রিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাপমাত্রা নেমেছে ৫ ডিগ্রিতে

ময়মনসিংহ বাদে দেশের সাত বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা। গতকাল মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের মরণ কামড়ে বিপর্যস্ত উত্তরের জনপদ। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে  জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা, সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে ঢাকা বিভাগের অধিকাংশ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করলেও ঢাকা জেলায় শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। ঢাকা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঈশ্বরদীতে ৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যান্য স্থানে তাপমাত্রা ছিল ৭ থেকে ৮.৫ ডিগ্রির মধ্যে। রংপুর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া দিনাজপুরে ৫.৩ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৬ ডিগ্রি, ডিমলায় ৭.২ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে ৮.৪ ডিগ্রি, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লায় ৯.৫ ডিগ্রি, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় ৭.১ ডিগ্রি ও বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ থেকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। সারা দেশেই মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা পড়তে পারে।

শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন ভোগান্তি। নানা শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ না পারছেন কাজে বের হতে, না পারছেন ক্ষুধার জ্বালা সইতে। তীব্র শীত নিবারণের পর্যাপ্ত কাপড়ও নেই অনেকের। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার শীত পরিস্থিতি-

দিনাজপুর : গতকাল দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সূর্যের দেখা মেলায় বিপর্যস্ত জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি আসে। বিকালের পর থেকে ফের বাড়ে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পরে রাস্তায় মানুষজন খুব একটা দেখা যায়নি। তীব্র শীত ও টানা শৈত্যপ্রবাহে বেড়েছে শীতজনিত রোগী। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে গতকাল জেলার সব বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। প্রচ- শীতের কারণে কমে গেছে শ্রমজীবীদের আয়। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি মাসজুড়েই তাপমাত্রা এমন থাকতে পারে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, প্রতিদিনই সূর্য দেখা যাচ্ছে এবং দিনে ৩/৪ ঘণ্টা সূর্যের আলো পাওয়া গেলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে সূর্যের আলো না পেলে ক্ষতি হতে পারে।

নীলফামারী : ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে বিপর্যস্ত নীলফামারী। বিকাল থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পথঘাট। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। গতকাল নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের মানুষ বের হলেও কাজ না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকরা অতি কষ্টে দিন পার করছেন। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুখেত।

বগুড়া : তীব্র শীতে স্টেশন, ফুটপাত ও বিভিন্ন খোলা স্থানে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। শহরের সাতমাথায় ফুটপাত ও হকার্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এদিকে বেলা পড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা পড়তে শুরু করে এবং তাপমাত্রা কমতে থাকে। শীত ও কুয়াশার কারণে আলুর খেতে পচা রোগ ধরায় চাষিরা শঙ্কায় রয়েছেন। হাতপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার যমুনার দুর্গম চলাঞ্চলে। চর এলাকার সজিরন বেওয়া (৭০) জানান, ৯ বার যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। ভিটেমাটি হারিয়ে এখন বাস করছেন অন্যের জমিতে। অভাবের কারণে তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পান না। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের প্রচ- শীতে ভয়াবহ কষ্টে দিন পার করছেন।

কুষ্টিয়া : তাপমাত্রা ৮.৫ ডিগ্রিতে নামায় আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল। তবে ভোগান্তি কমেনি শিক্ষার্থীদের। বরাবরের মতো গতকালও ঘোষণার আগেই কনকনে শীত ও কুয়াশার মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে স্কুলে চলে আসে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেয় সকাল ১০টার পরে। ততক্ষণে তো বাচ্চারা স্কুলে চলে যায়। এই বন্ধের কোনো মূল্য নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর