মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বটতলার নাটক খনা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

বটতলার নাটক খনা

নাটকের দল বটতলার প্রযোজনায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ‘খনা’ নাটকের দুই দিনের মঞ্চায়ন। গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হয় এই প্রদর্শনী। সামিনা লুৎফা নিত্রার রচনায় নাটকটির নির্দেশনায় রয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার।

কাহিনি অনুযায়ী, এক বিদুষী খনা যার অন্য নাম লীলাবতী। তার গল্পটা অনেক পুরনো, কিংবদন্তির ঘেরাটোপে বন্দি। তবু যেটুকুর তল খুঁজে পাওয়া যায় তাতে বোধ হয় যে, তিনি এক বিদুষী জ্যোতিষী, স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী। শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব সন্দর্শনে বরাহের হীনম্মন্যতা ও ঈর্ষা। পুরুষের এই ঈর্ষাটুকু বোঝা ততটা কঠিন নয়। কঠিন থাকেওনি। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তার খনা হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা। তাই একবিংশ শতকেও হাতরে বেড়ানো হয় খনার বচন।’ এ নাটকের কাহিনি এগিয়েছে চন্দ্রকেতু গড়কে কেন্দ্র করে। যেখানে আজও আছে খনা-মিহিরের ঢিবি। লঙ্কাদ্বীপ থেকে খনা মিহিরকে সঙ্গে করে পৌঁছে দেন তার পিতা বরাহ মিহিরের কাছে। বরাহ মিহির বালহণ্ডার দেউলানগর বা দেউলনগরের রাজা ধর্মকেতুর রাজজ্যোতিষী। পুত্র মিহিরের জন্মকুষ্ঠী ভুল গণনা করে তাকে ভাসিয়েছিলেন বিদ্যাধরীর জলে। সেই মিহিরকে নিয়ে খনা হাজির হন বরাহের সামনে, ভুল প্রমাণ করেন বরাহের গণনা। ধর্মকেতুর রাজসভায় পরিচিত হন মিহির ও লীলাবতী। রাজসভাসদ পদও লাভ করেন। বরাহ মেনে নিতে পারেন না পুত্রবধূর এই উত্থান। অন্যদিকে খনা নতুন দেশের নতুন মানুষদের সঙ্গে মেশেন বাঁধনহারা। প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ান শাসককুলের সামনে। লেখ্য ভাষাহীন প্রাকৃত বর্বরদের কৃষি সংক্রান্ত জ্ঞানকাণ্ডের বিকাশে গেঁথে চলেন বচনের পর বচন, যা বেঁচে আছে আজও কৃষকের মুখে মুখে। লীলার অবাধ্যতায় ক্রুদ্ধ বরাহ পুত্রকে আদেশ করেন খনার জিহ্বা কর্তন করে তাকে উৎসর্গ করতে।

খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধমাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূখণ্ডের বৃষ্টি জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণয় নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষোর সঙ্গে, সেই তার কাল। পুরুষতন্ত্র না শ্রেণি কাঠামো, নাকি উভয় দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপরিতে? মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবনত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার। খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা, কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তার, সে নেশা কি একরোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে করেন সম্মুখীন প্রশ্নের। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনি।

বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা, কাজী রোকসানা রুমা, ইমরান খান মুন্না, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান, শেউতি শাহগুফতা, পঙ্কজ মজুমদার, কামারুজ্জামান সাঈদ, হুমায়ূন আজম রেওয়াজ, রানা তিওয়ারি, হাফিজা আক্তার ঝুমা, আবদুল কাদের, মিজানুর রহমান, শাহনেওয়াজ ইফতি, রিশাদুর রহমান রিশাদ, লায়েকা বশীর, পলাশ নাথ, সানজিদা ইয়াসমীন, আশরাফুল অশ্রু ও সানজানা ফারাহ। অন্যদিকে, একই সময় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিংয়ের নাটক ‘রক্তকরবী’ ও স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় আরশিনগর প্রযোজিত নাটক ‘সিদ্ধার্থ’।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর