বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
চা শিল্পে সংকট

রেকর্ড উৎপাদনের পরও অসন্তোষ

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

রেকর্ড উৎপাদনের পরও অসন্তোষ

হুমকির মুখে চা শিল্প। ১৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের পরও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না চা বাগান মালিক ও উৎপাদকরা। উৎপাদন খরচের চেয়ে চায়ের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনছেন মালিকরা। চায়ের দাম বাড়াতে রপ্তানিতে জোর দেওয়া, অবৈধ পথে চা আসা বন্ধ করতে চা বোর্ড নানা উদ্যোগ নিলেও নিলামে চায়ের দাম বাড়ছে না। চায়ের দাম না পেলে বাগান মালিকরা চা চাষে উৎসাহ হারাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চায়ের দাম বৃদ্ধির জন্য আমরা নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। রপ্তানিতে জোর দিচ্ছি। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট করে অবৈধ পথে আসা চা জব্দ করা হচ্ছে। তবে দামের জন্য মানেরও ভূমিকা থাকে। মালিকদের চায়ের মান বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। জানা গেছে, ২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি বাগানে চা উৎপাদনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। চা বোর্ডের নানা পরিকল্পনা ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চায়ের নিলামে উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না উৎপাদকরা। প্রতি কেজি চা উৎপাদনে ২০০ টাকার বেশি খরচ পড়লেও চায়ের গড় দাম ২০০ টাকার কম। ফলে অনেক উৎপাদক লোকসান গুনছেন বলে দাবি করেছেন। দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড (ফিনলে) এর চিফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে চায়ের সরবরাহ বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। অনেক চা অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। অবিক্রীত চা গুদামজাত করতে গেলে গুদাম ভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়বে। তখন উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। আবার বেশি দিন চা রাখলে গুণগত মান কমে যাবে। সব মিলিয়ে আমরা জটিল পরিস্থিতিতে আছি। এভাবে চলতে থাকলে চা শিল্প হুমকিতে পড়বে। উদালিয়া চা বাগানের ম্যানেজার মো. নাদিম খান বলেন, দিন দিন চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু বিক্রয়মূল্য কমে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু চায়ের হয়তো ভালো দাম আছে। কিন্তু গড় বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। বারমাসিয়া ও এলাহী নূর চা বাগানের গ্রুপ ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বলেন, সমতলে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। এটা বেশ ইতিবাচক। কিন্তু সমতলের চায়ের গুণগত মান ভালো নয়। এ কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। অবৈধ পথে চা আসা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা কেজিপ্রতি ২০০ টাকার বেশি খরচ করে ১৬৫ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত দাম পাচ্ছি। বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুল রহমান বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন খুশির খবর। কিন্তু উৎপাদকরা যাতে চায়ের ভালো দাম পান সেটাও মাথায় রাখতে হবে। দাম পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কীভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায় সেদিকেও মনোযোগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে দেশে চা আসা বন্ধ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর