বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিন মেয়েসহ বিষপান প্রাণ গেল ছোট মেয়ের

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

‘আমি মারা গেলে আমার বাচ্চারা সবার অযত্ন-অবহেলায় বেঁচে থাকবে। কষ্টের শেষ থাকবে না। তাই আমার সঙ্গে তাদেরও নিয়ে যেতে চাই। এ দুনিয়া আমার কাছে এখন ভারী হয়ে উঠছে। আমি আর এ দুনিয়ায় থাকতে চাই না, আমার মেয়েদেরও রাখতে চাই না। এত জ্বালাতন আর সহ্য করতে পারি না। এতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কোনো দোষ নেই।’ গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ কথাগুলো বলছিলেন মা পলি বেগম। জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে তিন কন্যাসন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গৃহবধূ পলি বেগম। এ ঘটনায় গতকাল সকালে সায়েরা খাতুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেড় বছরের মেয়ে মীমের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে পলি তিন কন্যাসন্তানসহ বিষ পান করেন। পলি বেগম কাশিয়ানীর লঙ্কার চর গ্রামের টিটু মোল্লার স্ত্রী। গুরুতর অবস্থায় আট বছরের মেয়ে আফসানা ও আড়াই বছরের আমেনাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে লঙ্কার চর গ্রামে হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে টিটু মোল্লার সঙ্গে একই উপজেলার খাগড়াবাড়ি গ্রামের শরিফুল শেখের মেয়ে পলি বেগমের বিয়ে হয়। তাদের তিনটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া হলে শাশুড়ি সেকেলা বেগম পলির বাবার একাধিক বিয়ে নিয়ে তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। মঙ্গলবার সকালে পলি শাশুড়ির উঠানে জ্বালানি (গাছের পাতা) শুকাতে দেন। এ নিয়ে শাশুড়ি গালমন্দসহ পলির বাবার একাধিক বিয়ের বিষয়ে নানান বাজে মন্তব্য শুরু করেন। এতে মনঃক্ষুণ্ন হয়ে বিকালে বাড়িতে থাকা বিষ তিন কন্যাসন্তানকে পান করিয়ে নিজেও পান করেন। টের পেয়ে পরিবারের লোকজন প্রথমে তাদের কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে সায়েরা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই গতকাল সকালে মীমের মৃত্যু হয়। পলি বেগমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, তার স্বামী বাড়িতে থাকেন না। মেয়েদের নিয়ে তিনি গ্রামে থাকেন। শাশুড়ি পলিকে সব সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। টিটু মোল্লা বলেন, ‘আমি ঢাকায় স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করি। স্ত্রী তিন মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি থাকে। আমার মা প্রায়ই তাকে নির্যাতন করত বলে ফোনে বলত। মঙ্গলবারও তাকে নানানভাবে নির্যাতন করেছে বলে ফোনে জানায়। আমি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে দুপুরেই রওনা হই। পরে জানতে পারি আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ খেয়েছে। ছোট মেয়ে মারা গেছে। অন্য দুই মেয়ের কী হয় আল্লাহই জানেন। আল্লাহ যেন আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে সুস্থ করে দেন।’ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে মা ও তিন মেয়ে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ছোট মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, অন্য তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রমের আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না তারা আশঙ্কামুক্ত কি না।

 

সর্বশেষ খবর