বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্ব ইজতেমা শুরু কাল

নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ হাজার সদস্য

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

টঙ্গীর তুরাগতীরে শুক্রবার ভোরে আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। ১৬০ একর জমিতে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন। চার স্তরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় ছাড়াও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রবিবার দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা।

৯, ১০, ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। গত মঙ্গলবার বিকালেই বিভিন্ন এলাকার মুসল্লি আসতে শুরু করেছে। তাদের নিরাপত্তায় মাঠের ভিতরে ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ হাজার সদস্য কাজ করবে।

এ ছাড়া ২ শতাধিক সিসিটিভি, ১৪টি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণ করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা তাদের অবস্থান জোরদার করতে শুরু করেছে। গতকাল পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালক গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আলাদা ব্রিফিং করেছেন। ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন।’ র‌্যাব মহাপরিচালকের ব্রিফিং : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় জঙ্গি হামলার কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। এ সময় র‌্যাবের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন বিশ্ব ইজতেমা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। ইজতেমার পাশের এলাকায়ও নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্ব ইজতেমায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাব সদর দফতর, র‌্যাব-১সহ অন্য পাঁচটি ব্যাটালিয়ন দায়িত্বরত থাকবে। ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া সদর দফতরে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম থেকেও বিশ্ব ইজতেমা মনিটরিং করা হচ্ছে। ইজতেমাস্থলসহ পাশের এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রম করা হচ্ছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র‌্যাবের স্পেশাল টিম, বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাবের হেলিকপ্টার প্যাট্রল প্রদান করা হবে। বিশ্ব ইজতেমায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ময়দান ঘিরে র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে; যাতে ইজতেমা এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা যায়। যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধকল্পে দুই ধাপে আয়োজিত ইজতেমায় কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আইজিপির ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন : বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘দেশবাসীকে আমি অনুরোধ করব ইজতেমা নিয়ে কেউ গুজবে কান দেবেন না। একটি মহল দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্টের জন্য চেষ্টা করে। ইজতেমাস্থলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি।’ তিনি টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তা পরিদর্শন করে গতকাল দুপুরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত পুলিশের বিশ্ব ইজতেমা কন্ট্রোল রুম চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। এ সময় অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা সিটি এসবির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. নুরুল ইসলাম, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের (অপারেশন) ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম।

আইজিপি বলেন, ‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা সব সময় তথ্য পাচ্ছি। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। হেলিকপ্টার ছাড়াও ড্রোন দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা সঠিক আছে কি না এবং মানুষের গতিবিধি ওয়াচ করছি। ইজতেমাস্থলে বিদেশি মেহমানদের স্বাগত জানানোর জন্য এখানকার মুরুব্বিরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলে আমাদের অবহিত করেছেন। তাদের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মুসুল্লিদের গমনাগমন স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’ আইজিপি আশা করে বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে। আমি আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ হাজার সদস্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইজতেমার যথাযথ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান নিরাপত্তায় বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ডগ স্কোয়াড, বিস্ফোরক প্রশিক্ষক টিম, ক্রাইম সিন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও আমাদের প্রশিক্ষক টিম, নৌবহর ও হেলিকপ্টার দিয়েও টহলব্যবস্থা প্রস্তুত থাকবে। সোয়াত টিম থাকবে, সিআরটি থাকবে। এ ছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, আইপি ক্যামেরা ও নাইট ভিশন ক্যামেরা দিয়ে সার্ভিসেস করব। এর বাইরে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, সাদা পোশাকে এবং পোশাকে পুলিশের সদস্যরা থাকবে। ইজতেমাস্থলে ভিআইপি-ভিভিআইপিরা এলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। শুধু যে ইজতেমাস্থল তা কিন্তু নয়, রেলস্টেশন থেকে শুরু করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা জেলা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবাই মিলে আমরা একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা বিভিন্ন ইউনিট, র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে নিরাপত্তা পরিককল্পনা গ্রহণ করেছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর