শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
একুশে বইমেলা

সকালটা ছোটদের, বড়দের বিকাল

মোস্তফা মতিহার

সকালটা ছোটদের, বড়দের বিকাল

বইমেলার দ্বিতীয় দিন গতকাল ছিল প্রথম শুক্রবার। ছুটির দিন হওয়ায় বেলা ১১টায় খোলে মেলার প্রবেশদ্বার। দলবেঁধে এদিন মেলায় প্রবেশ করেছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। বিকাল থেকে বড়দের দখলে থাকলেও প্রথম শিশুপ্রহর হওয়াতে সকালে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিল খুদে পাঠকদের দখলে।

বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার শিশুপ্রহরের সিসিমপুরে শিশুদের দুরন্তপনা ছিল উল্লেখ করার মতো। দ্বিতীয় দিনের প্রথম শুক্রবার প্রথম ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস থাকলেও বইয়ের বিক্রি খুব একটা চোখে পড়েনি। হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া এদিন বেশির ভাগ প্রকাশক অলস সময় কাটিয়েছেন। এদিকে লোকসমাগম বেশি হওয়ায় এদিনের মেলা ছিল ধুলায় ধূসর। ধুলা নিরসনে নিয়ম করে প্রতিদিন পানি ছিটানোর কথা থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পানি ছিটানোর কোনো চিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। আর প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও যত্রতত্র পড়ে ছিল নির্মাণসামগ্রী ও আবর্জনা। এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলা একাডেমি     কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

ক্ষতিগ্রস্ত ৩২ প্রকাশক : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার বিচ্ছিন্ন অংশে স্টল বরাদ্দ পাওয়াতে হুমকির মুখে ৩২ জন প্রকাশক। তারা এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলা একাডেমির স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিবারই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। একটা সিন্ডিকেটের কাছে বাংলা একাডেমি বাধ্য। বিচ্ছিন্ন অংশে বরাদ্দ পাওয়া স্টলগুলো হলো- জোনাকী প্রকাশনী, মুক্তদেশ, কথামেলা, ইলমা, বর্ণমালা, শৈলী প্রকাশন, রচয়িতা, পানগুছি, আলোর ঠিকানা, প্রিতম প্রকাশ, গতিধারা, সিয়ান পাবলিকেশন্স, হুদহুদ প্রকাশন, দেশজ, দ্বিমিক, সুলেখা, মেঘনা, কাকাতুয়া, বৈতরণী, মাছরাঙা, ছায়া প্রকাশন, কবিতাচর্চা, এপিপিএল, অক্ষর, মানবাধিকার, স্বনির্ভর, কেন্দ্রবিন্দু, নবকথন, বাসিয়া, কালের চিঠি প্রভৃতি। জোনাকী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন বলেন, বিচ্ছিন্ন অংশে স্টল বরাদ্দ দেওয়ায় আমাদের এখন পথে বসার অবস্থা। এ অবস্থার নিরসন না হলে আমাদের পক্ষে মেলা করা সম্ভব নয়। তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান কথামেলার আবদুর রউফ বকুল ও ইলমা প্রকাশনীর মাহবুবুর রহমান সুমন। গতকাল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিনে নতুন বই এসেছে ৩১টি।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মহাকবি আলাউল শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. আবুল কাসেম।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাঙালি ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের অবাঙালি গবেষকদের বিচারে খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকের কবি আলাউল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আখ্যান কবি হিসেবে স্বীকৃত। আলাউল রচিত পদ্মাবতী, সিকান্দরনামা, তোহ্ফা, রাগতালনামা ও পদাবলি এবং কাজী দৌলতের সতী-ময়না লোর-চন্দ্রানী’র শেষাংশ হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপির সাহায্যে সম্পাদিত গ্রন্থাকারে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন নতুন তথ্যের আলোকে মহাকবি আলাউলকে যে তত্ত্বীয় পরিসরে গবেষকরা উপস্থাপন করছেন তাতে তার সাহিত্যের গভীরতা, দূরদৃষ্টি-সম্পন্নতা এবং মহাকাল স্পর্শের ক্ষমতা স্পষ্ট হয়।

আলোচকরা বলেন, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিকর্ম ‘ছয়ফুলমুলক-বদিউজ্জামান’। এই কাব্যের পরিচয় কেবল আখ্যানকাব্য বা প্রণয়োপাখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই কাহিনি কিচ্ছা আকারে যাত্রাপালায়ও পরিবেশিত হয়েছে। কাজেই এই পুথির আবেদন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। মহাকবি আলাউল তাঁর ভাষার সৌকর্য এবং পাণ্ডিত্যের কারণে মধ্যযুগের অন্যান্য কবিদের থেকে স্বকীয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যকর্মের পাঠোদ্ধার, সম্পাদনা বা আধুনিক বাংলা ভাষার অনুবাদ অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ। এ ধরনের সাহিত্য পাঠোদ্ধার করতে হলে হস্তলিখিত মূল পাণ্ডুলিপি বা পুথির ওপরই নির্ভর করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মো. আবুল কাসেম বলেন, মধ্যযুগে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে বাংলা ভাষা মুসলমানের ভাষা নয়, হিন্দুর ভাষা। তথাপি মধ্যযুগের মুসলমান কবিগণ বাংলা ভাষায় প্রচুর সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন। মহাকবি আলাউলও এর ব্যতিক্রম নন। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের একাধিক পাঠ থেকে লেখকের অভিপ্রেত পাঠটি পুনরুদ্ধার করাই পাণ্ডুলিপি বা পুথি সম্পাদনার মূল উদ্দেশ্য। এ কষ্টসাধ্য কাজে তরুণ গবেষকদের উৎসাহিত করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য পুথি এবং পাণ্ডুলিপি সহজলভ্য করতে হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রুবী রহমান, আসাদ মান্নান এবং মাহবুব সাদিক। আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ, মুস্তাফা ওয়ালিদ এবং মজুমদার বিপ্লব। এ ছাড়া ছিল ড. আবুল কালাম আজাদ-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন-এর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন তিমির নন্দী, মহিউজ্জামান চৌধুরী, প্রিয়াংকা গোপ, জুলি শারমিলি এবং মানিক রহমান।

 

সর্বশেষ খবর