রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রাচীন ও মধ্যযুগের নিদর্শন

গাইবান্ধায় বিরাট বাজার ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রাচীন ও মধ্যযুগের নিদর্শন

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিরাট রাজার ঢিবিতে প্রথমবারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য পরিচালনা করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। খননের মাঝামাঝি সময়ে এসে বেরিয়ে আসছে প্রাচীন ও মধ্য যুগের কিছু অবকাঠামো বলে ধারণা করছেন খননকাজে নিয়োজিত রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আট সদস্যের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল। বর্তমানে ঢিবিটির আকার ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪ মিটার, বলছে খননকারী দল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বিরাট রাজার ঢিবি খননকাজ শুরু করা হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি খনন দল এ কাজটি করছে। ২০ জন শ্রমিক খননকাজে নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়া খননকাজে দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানাসহ অন্য সদস্যরা হলেন- ড. আহমেদ মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা।

গাইবান্ধার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বিরাট রাজার ঢিবি বা গড়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে গেছেন। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজা বিরাটের এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় রাজাহার ইউনিয়নের এই জায়গায় বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত বিরাট রাজার বসতি ছিল। এটি পরিচিত বিরাট নগর নামে। প্রাচীনকালে এটি দুর্গনগরী ছিল। এখানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলাসহ সারা দেশ থেকে প্রতি বছর বৈশাখে মাসব্যাপী রাজা বিরাটের তীর্থমেলায় হিন্দুধর্মের হাজার হাজার লোকজন আসেন। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজাহার ইউনিয়নের বিরাট নগরীর প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। বিরাট নগরের পশ্চিমাংশে প্রাচীনকীর্তির জনশ্রুতি আছে এটি ছিল দুর্গনগরী। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সু-উচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। তবে খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দুর্গনগরীর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দু-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, বর্তমান খননে ধারণার চেয়ে অধিক বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়), ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। তিনি বলেন, নিদর্শনগুলো ঠিক কোনো সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল, বড় আকারে খননকাজ সম্পন্ন না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। পুরো খননকাজ শেষ হলে এগুলো আসলে কোন সময়ের তা জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, প্রত্নতত্ত্বস্থলটি ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। তবে বড় পরিসরে খননকাজ করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেই সঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর