সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

জমে উঠেছে উপজেলা ভোট

আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি ♦ ভোটে যাবে না বিএনপি

রফিকুল ইসলাম রনি ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জমে উঠেছে উপজেলা ভোট

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা না হলেও সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা নিজেদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয়ভাবে প্রার্থী করবে না। ব্যাপক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে উন্মুক্ত রাখবে ক্ষমতাসীন দল। ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ী হতে হবে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলাতেও ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত আছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির। কেন্দ্র ভোটে আগ্রহ না দেখালেও তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ দলীয় প্রতীকবিহীন ভোটে অংশ নিয়ে জনপ্রতিনিধি হতে চান। তাদের কেউ নীরবে, কেউ সরবে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখতে আগ্রহী ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট আসনের এমপিদের থেকে প্রভাবমুক্ত রাখতে দলীয়ভাবে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা জোরালো হবে বলে অভিমত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের।

স্থানীয় নির্বাচনের অন্যতম স্তর উপজেলা নির্বাচনে ভোটে আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের দলীয় পদন্ডপদবি থাকার পরও সংসদ নির্বাচনে নৌকা না পাওয়া জনসংশ্লিষ্ট নেতারা। এবার ক্ষমতাসীন দল যেহেতু দলীয়ভাবে প্রার্থী দেবে না, সে কারণে জনপ্রিয়তা যাচাই করার এটা একটা সুযোগ মনে করছেন তারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকার হাটবাজার, চা স্টল চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিজেদের যোগ্য ব্যক্তি মনে করে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। 

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো. মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে দৌড়ানোর বিষয়টি আর নেই। সময় এখন জনগণের কাছে পরীক্ষা দেওয়া এবং আস্থা অর্জন করাই মুখ্য। সেই জায়গা থেকে আমি জনগণের কাছে গিয়েছি, যাচ্ছি এবং আমৃত্যু যাব। জনগণও আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করবে বলে মনে হয়। বাকিটা নির্বাচনে বোঝা যাবে। রাজনৈতিক দলের বাইরেও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এবার উপজেলা নির্বাচনে বেশ আগ্রহী হয়েছেন। দলীয় মনোনয়নের ব্যাপার নেই, অন্যদিকে কারও ওপর চাপও থাকবে না। সে কারণে এলাকায় পরিচ্ছন্ন ইমেজ আছে এমন ব্যক্তিরাও প্রার্থী হচ্ছেন। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় ভোট করতে চান সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মোকারম সরদার। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সেবা করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সহায়তাসামগ্রী প্রদানসহ নানা সামাজিক কাজে জড়িত। কাজেই নিকলীর সর্বস্তরের মানুষ আমাকে চান-এটাই বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন জমে উঠছে বলেই মনে হচ্ছে। আগেই নিশ্চিত করা হয়েছে কাউকে প্রতীক দেওয়া হবে না। সে কারণে এ নির্বাচনে প্রার্থীও বেশি হবে। প্রার্থী বেশি হলেও সংঘাত হবে না। কারণ নির্বাচন কমিশন শক্তহাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমন করেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

উপজেলা নির্বাচনেও যাবে না বিএনপি : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। তবে দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে তৃণমূলের অনেক নেতা। দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে নিরুৎসাহিত করা হবে না। দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি। শিগগিরই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে শতাধিক উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা। তৃণমূলের অনেক নেতার এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। এতে বিএনপির অনেক নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দলের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার জন্য এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। তিনি বলেন, যদিও এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না তবুও নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখা ও ঐক্য ধরে রাখার জন্য ভোট করছেন। উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।   

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক লাভ-ক্ষতি নিয়ে ভাবছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সরকার এর থেকে কী ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা পাবে। আর নির্বাচন না করলে বিএনপির রাজনৈতিকভাবে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে-এটা দলে আলোচনা আছে। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে না করায় তাদের একাধিক প্রার্থী থাকছে। তাতে এ নির্বাচনে সরকারি দলের একতরফা প্রভাব থাকবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে ভালো করার সম্ভাবনা তারা দেখছেন। তারা এও বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পরপরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বিএনপিকে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে বিরোধীদের কাছ থেকে সরকারের ‘বৈধতা’ পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে। মনে হতে পারে, বিএনপি সরকারকে মেনে নিয়েছে। এর সুযোগ নেবে সরকার। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নেতাদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা এখনো দোলাচলে রয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তাই বিএনপি জাতীয় নির্বাচন যেভাবে বর্জন করেছে উপজেলা নির্বাচনও সেভাবে বর্জন করবে। দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে আলোচনা না হলেও আমি যতটুকু জানি আগের সিদ্ধান্তই এখনো বলবৎ আছে।

সর্বশেষ খবর