সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কর্মমুখর দিনেও বইপ্রেমীদের ভিড়

মোস্তফা মতিহার

কর্মমুখর দিনেও বইপ্রেমীদের ভিড়

টানা দুই দিন ছুটির পর কর্মমুখর দিনে লোকজন কম থাকে আর বিক্রিও কম হয়- এমনটি হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। কিন্তু গতকালের অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিনে ঘটেছে তার উল্টোটা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল গতকালও। বইপ্রেমীদের  ভিড়ে অন্যরকম ভালোলাগার দৃশ্য ছিল স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাড়ে ৯ লাখ বর্গফুটের পরিসর।

বইপ্রেমীদের আগমন ও আশাব্যঞ্জক বিক্রিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বেশিরভাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতরা। বিকাল ৩টায় মেলার প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত হওয়ার পর পরিবেশ কিছুটা ঢিলেঢালা থাকলেও সন্ধ্যার আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সন্তুষ্টি প্রকাশ করে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, যতটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি  লোকজনের আগমন ঘটেছে। সাধারণত শুক্র ও শনিবারের ছুটির পর রবিবার ভিড় একটু কম হয়। কিন্তু বইপ্রেমীদের পদচারণে ও আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, শুধু দর্শনার্থীরাই আসেনি প্রকৃত বইপ্রেমীরাও এসেছে। নিজেদের প্রকাশনীর বিক্রি নিয়ে তৃপ্ত আমজাদ হোসেন কাজল জানান, এরই মধ্যে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমেদের ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’ বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গেছে, সোমবার বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ মেলায় চলে আসবে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ‘কারণ, আমি ঘুমাতে পারি না’ : দার্শনিক, চিন্তক ও কবি জালাল উদ্দিন রুমির প্রেম ও বিরহের কবিতা নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর অনুবাদে প্রকাশনা সংস্থা নালন্দা প্রকাশ করেছে ‘কারণ, আমি ঘুমাতে পারি না’। রুমির শতাধিক কবিতার অনুবাদ আকারে প্রকাশিত এই বইটি পাঠকদের দ্বারা সমাদৃত হচ্ছে বলে জানালেন প্রকাশনা সংস্থা নালন্দার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সজল  চৌধুরী। দাম ৪৫০ টাকা।

রবিবার মেলার চতুর্থ দিনে নতুন বই আসে ৬৬টি।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাফর ওয়াজেদ এবং আমিনুর রহমান সুলতান। সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। আলোচনার শুরুতেই কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাউল সংগীতকে সামাজিক জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মানস ঊনবিংশ শতকে যে কয়েকজন সাহিত্যসাধক নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন কাঙাল হরিনাথ তাদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ। কাঙাল হরিনাথ হিরন্ময় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। কাঙাল হরিনাথের জীবন-দর্শন, আধ্যাত্ম ভাবনা ও মরমি মানসের পরিচয় পাওয়া যায় তার বাউল সংগীতের মধ্য দিয়ে। এই বাউল সংগীতজ্ঞের কথা ও সুর এবং সহজসরল প্রাণস্পর্শী ভাব কী শিক্ষিত আর কী নিরক্ষর, সবাইকেই মুগ্ধ কর।

আলোচকরা বলেন, রুচিশীল ও শিল্পবোধ-সম্পন্ন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন সৌন্দর্যের পূজারি। আমাদের আবহমান বাংলার লোক-ঐতিহ্যকে হৃদয় ধারণ করেছিলেন তিনি। সংবাদপত্র ও সাহিত্যকে তিনি শাসক ও শাসকদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি যেমন বাউল গান অধ্যাত্মবাদের কথা বলেছেন তেমনি সমাজ-সংস্কারের  ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।

মুনতাসীর মামুন বলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন একইসঙ্গে বিদ্রোহী এবং অধ্যাত্মবাদী। তার কর্মের ব্যাপ্তি ছিল অনেক দূর-বিস্তৃত। সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি প্রান্তিক অবস্থানে থেকেও সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার ও লেখক তানভীর মোকাম্মেল, শিশুসাহিত্যিক বেণীমাধব সরকার, গবেষক কাজল রশীদ শাহীন এবং কবি ফারুক আহমদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আনিসুল হক, ফারুক মাহমুদ এবং ঝর্না রহমান। আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং নায়লা তারানুম চৌধুরী। আরও অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নকশিকাঁথা’। একক সংগীত পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন, চদনা মজুমদার, আবদুল লতিফ শাহ, আরিফ দেওয়ান এবং সরকার আমিরুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর