বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই সপ্তাহেও হদিস নেই দুই কিশোরীর

সাখাওয়াত কাওসার

দুই সপ্তাহেও হদিস মেলেনি রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া দুই কিশোরী সুমনা ও খাদিজার। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিত, তারা হয়তো এখনো পাচারকারীদের কবলেই রয়েছে। তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে কিডন্যাপ করেছে পাচারকারীরা। গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কিশোরীদের অবস্থান সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকায় ছিল।

এ বিষয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পাচারকারীদের কবলে দুই কিশোরী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের সঙ্গে ওই কিশোরীদের যোগাযোগ ছিল তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই কিশোরী পাচারের সঙ্গে একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। যশোর ও সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করা চক্রের এসব সদস্য দীর্ঘদিন পার্শ্ববর্তী দেশে নারী এবং কিশোরী পাচার করে আসছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে টার্গেটকৃত কিশোরী-নারীদের নানাভাবে আকর্ষণীয় কাজের অফার দিয়ে প্ররোচিত করে আসছে। আবার ওই দালালদের অনেকে টার্গেটকৃত নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা নানাভাবে ব্ল্যাকমেল করে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিচ্ছে। পরে সুযোগ বুঝে ওই ভুক্তভোগীদের পাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। পাচার হওয়ার পর ওই ভুক্তভোগীদের পার্শ¦বর্তী দেশের বিভিন্ন হোটেল, পতিতালয় কিংবা বিভিন্ন স্পা সেন্টারে বিক্রি করে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (রমনা) উপকমিশনার হুমায়ুন কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরপরই আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমাদের একাধিক টিম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, পাচার হওয়া দুই কিশোরীর সঙ্গে এক নারীসহ পাঁচজন ব্যক্তির কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজনের বাড়ি যশোর এবং সাতক্ষীরায়। এদের সঙ্গে ভারতীয় কয়েকটি নম্বরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিদের নামে চোরাকারবারি এবং নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে। নিখোঁজ সুমনার হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা ইদ্রিস ও গৃহকর্মী মা নিলু আক্তার গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তারা বলতে থাকেন, আমরা কি আমাদের মেয়েকে পাব না? তার নয় মাস বয়সী সন্তানের কাছে আমরা কী জবাব দেব? গত ২৮ জানুয়ারি নিখোঁজ সুমনার মা নিলু আক্তার হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সরকার সিরিয়াস হলে দ্রুতই এর সমাধান সম্ভব। জানা গেছে, ১০ বছর ধরে হাজারীবাগের বোরহানপুর এলাকার বিভিন্ন ভাড়ায় বাসায় বসবাস করছে এই দম্পতি। গত ২৩ জানুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে সুমনা তার বান্ধবী খাদিজাকে নিয়ে বাসার সামনে ঘুরতে বের হয়। এরপর থেকেই তাদের কোনো খোঁজ নেই। ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে সুমনার ইমো নম্বর থেকে একটি কল আসে তার ভাই রাজুর মোবাইলে। সেখানে অজ্ঞতনামা একজন লোক বলছিলেন, আপনাদের মেয়ে ভারতে পুলিশের কাস্টডিতে আছে। যথাযথ মাধ্যমে চেষ্টা করার কথা বলা হয়। ওই সময় সুমনাকেও ভিডিও কলে কথা বলতে দেন অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি। তখন সুমনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ভাই আমারে তোরা বাঁচা। আমি ও খাদিজা খুব বিপদে আছি। এরপর থেকে সুমনার সেলফোনটি আর চালু হয়নি। খাদিজার মা নাসিমা আক্তার কথা বলার আগেই কাঁদতে শুরু করেন। তিনি বলেন, দুই বছর আগে সবুজ নামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় খাদিজার। তবে তারা থাকত বাবা আহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে আড়াই হাজারের মেঘনায়। নিখোঁজের ২০ দিন আগে আমাকে দেখতে খাদিজা ঢাকায় আসে। এরপরই কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এমন দৃশ্যে রীতিমতো ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আমাদের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে কাজ করছি। সীমান্তবর্তী এলাকা সাতক্ষীরায় তাদের অবস্থান দেখা গেছে।

আমাদের পাশাপাশি ডিবি এবং সিআইডির টিম কাজ করছে। বিশ্বাস করি খুব শিগগিরই আপনাদের কিছু জানাতে পারব।

সর্বশেষ খবর