শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছাদেও করা যায় এমন বাগান

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

ছাদেও করা যায় এমন বাগান

বেদানা বা আনার খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদানার প্রতি আকর্ষণ সবার। দানাদার এই ফল মুখে দিলেই এর সুমিষ্ট রসে মন-প্রাণ ভরে ওঠে। পুষ্টিগুণে ভরপুর স্বাস্থ্যসম্মত বলবর্ধক এই ফল, রোগীদের পথ্য হিসেবে আদর্শ। হর্টিকালচার বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে ৩৮ হাজার ৩২৮ টন বেদানা আমদানি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারদর ৮ হাজার কোটি টাকা। বাজারে এর বিপুল চাহিদা থাকলেও আবহাওয়াজনিত কারণে আমাদের দেশে এই ফলের চাষ করা সম্ভব হয় না। এবার নাটোর পৌরশহরের দক্ষিণ বড়গাছায় বাসার ছাদবাগানে আমদানিনির্ভর ফল বেদানা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহিল বাকি তরিত নামে এক তরুণ আইনজীবী। মাত্র ৪০০ স্কয়ার ফুট আয়তনের ছাদে বছরে প্রায় ৩০০ কেজি উন্নত জাতের বেদানা উৎপাদন করে তিনি সাড়া ফেলেছেন।

শুরুটা শখের বসে হলেও বুদ্ধি খাটিয়ে ছাদবাগানে এই ফলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। অধিকাংশ গাছেই ঝুলতে দেখা গেছে টকটকে লাল বেদানা। তার বাগানে চাষ হওয়া বেদানার রং, রসালো, সুস্বাদু এবং নরম বীজের কারণে বাজারে আমদানিকৃত বেদানার তুলনায় অনেকটা বেশি চাহিদা। ছাদবাগানে বিদেশি বেদানা-আনার দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। ভালো ফল পাওয়ায় আশপাশের ছাদেও বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করতে চান তিনি। স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন, এখানে চাষ হওয়া বেদানাগুলো যেমন রসালো তেমনি সুমিষ্ট।

রীতিমতো অনেকেই চারা সংগ্রহ করছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন ওই আইনজীবীর কাছ থেকে। আবদুল্লাহিল বাকি তরিত বলেন, আমি মহামারি করোনার মধ্যে শুরু করি ছাদবাগান। শখের বসে বাড়ির ছাদে সবজির পাশাপাশি ফলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার ৫২টি গাছে বেদানা ধরছে। যা স্বাদে ও মানে আমদানি করা বেদানার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। প্রথম বছর থেকেই ফল দিয়েছে এবং প্রতিটি বেদানা ৩০০-৩৫০ গ্রাম ওজনের হয়। এগুলো যেমন রসালো তেমনি সুমিষ্ট। তিনি বলেন, গাছগুলোর পরিচর্যায় মাটি, গোবর, খইল, সবজি, পচা পানি দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করা হয়। একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, গাছের গোড়ায় কোনো প্রকার পানি জমতে দেওয়া যাবে না। নিষ্কাশনব্যবস্থা অবশ্যই ভালো থাকতে হবে বলে জানান তরিত। কৃষি উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহিল বাকি তরিতের স্ত্রী তাসনিন সুলতানা বলেন, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দিতে পারছি। এতে করে তারাও খুশি হন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকাল নেই এমন দেশে বেদানার আবাদ বেশি হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকাল থাকায় মাটিতে রোপণ করে তেমন ভালো ফল পাওয়া যায় না। তবে বাড়ির ছাদে জিও ব্যাগ বা বড় টবে চাষ করা হলে বেদানার রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, নাটোরে বাসাবাড়ির ছাদগুলো কৃষিকাজের আওতায় আনার জন্য আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। আর বাড়ির ছাদে এসব ফল চাষ করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (হর্টিকালচার উইং) পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, এই ফল বাংলাদেশে সরাসরি মাটিতে চাষ করা যায় না। তবে বাড়ির ছাদে বড় টবে কিংবা ব্যাগে চাষ করা যায়। দেশে বেদানার চাহিদার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও থাইল্যান্ডসহ অন্তত সাতটি দেশ থেকে আসা বেদানার দামও থাকে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। নাটোরে উঁচু ভবনগুলোতে সবজির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ করলে স্থানীয় পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর