বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দালালের খপ্পরে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মাদারীপুরে এক আদম দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ৩০-৩৫টি গ্রামের শতাধিক যুবকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে খোকন চোকদার নামের এই আদম দালাল। এ ঘটনায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার পাশাপাশি বারবার প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, একাধিক মামলা হলেও অদৃশ্য কারণেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে অভিযুক্ত খোকন। যদিও পুলিশ বলছে, প্রতারককে ধরতে তাদের অভিযান চলছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মাদ্রা গ্রামের মোতালেব খানের ছেলে আল আমিন খানকে বিদেশ পাঠানোর জন্য দালাল খোকন চোকদার ৭ লাখ টাকা নেন। একই গ্রামের রুবেল হাওলাদার ও ইমরান খানের কাছ থেকেও ৭ লাখ করে টাকা নেন। দুই মাসের মধ্যে বিদেশে নেওয়ার কথা থাকলেও আড়াই বছরেও কেউই যেতে পারেননি বিদেশে। এতে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। শুধু আল আমিন, ইমরান, রুবেল নয়, এমন শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও খোকন চোকদার। স্থানীয়ভাবে একবার বিষয়টি নিয়ে শালিস মীমাংসায় বসা হয়েছিল। সেখানে প্রতারণার শিকার শতাধিক যুবক অভিযোগ করেছিল।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গবাদিপশু বিক্রি, জমি বন্ধকসহ সুদে এনে তারা লাখ লাখ টাকা তুলে দেন খোকনের হাতে। বিশ্বাস অর্জন করাতে অসহায় মানুষদের বিভিন্ন ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছিল সে। অথচ খোকনের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই টাকা ছিল না। পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করতে থাকে খোকন। একপর্যায়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয় সে। এ অবস্থায় আদালত ও প্রশাসনের দারস্থ হন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের দাবি, দেড় বছর আগে বিদেশে নেওয়ার জন্য খোকন চোকদার ৭ লাখ টাকা নেয়। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে পর্তুগাল নিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু দেড় বছরেও সে বিদেশে পাঠাতে পারেনি। তারপর টাকা চাইলে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আল-আমিন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, বিদেশে নেয়নি, আর আমার পাওনা ৭ লাখ টাকাও ফেরত দেয়নি। ধারদেনা করে টাকা দিয়েছি। এখন খুব সমস্যার মধ্যে আছি। ভুক্তভোগী মাইনুল হোসাইন সুজন বলেন, আমি বিদেশে যাওয়ার জন্য খোকন চোকদারকে টাকা দিই। কিন্তু সে বিদেশ নিচ্ছে না। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, বিদেশে গিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনব। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। খোকন দালালের মুখে ছিল মধু, আর অন্তরে বিষ। এই প্রতারকের কথায় আমরা ১০০-এর বেশি মানুষ ফাঁদে পড়েছি। আমরা পাওনা টাকা ফেরত চাই, পাশাপাশি প্রতারক খোকনের বিচার চাই।

মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, বিদেশে নেওয়ার কথা বলে অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন খোকন চোকদার। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা খোকন। তাকে ধরতে চলছে অভিযান। শিগগিরই সে আইনের হাতে ধরা পড়বে। এদিকে ঘটনা জানতে অভিযুক্ত খোকন চোকদারের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

সর্বশেষ খবর