রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাজুস ফেয়ারের সমাপ্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজুস ফেয়ারের সমাপ্তি

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্দা নামল তিন দিনের বাজুস ফেয়ার ২০২৪-এর। জমকালো সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে ফেয়ারের কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে। গতকাল আইসিসিবির নবরাত্রি হলে বাজুস ফেয়ারের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ডেইলি সানের সম্পাদক মো. রেজাউল করিম লোটাস, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোশফেকুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সেক্রেটারি মো. মাকসুদুর রহমান, বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল কুমার রায় এবং বাজুসের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল। অনুষ্ঠানে কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, জুয়েলারি শিল্পের যে সম্ভাবনা তা অনেকদূর এগিয়েছে সায়েম সোবহান আনভীরের সুযোগ্য নেতৃত্বে। গার্মেন্টস, ওষুধ এবং চামড়াশিল্পের মতো জুয়েলারি শিল্প দেশের অনেক সম্ভাবনাময় খাত। এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস বলেন, বাজুস মেলা শুধু সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেনি। এই মেলা কূটনৈতিকপাড়ায়ও অনেক সাড়া ফেলেছে। অনেক দেশের দূতাবাসের কর্তারা এ মেলায় এসেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে বাজুসের মার্কেট আছে সেই দেশগুলোতে বাজুসের এই ধরনের মেলা করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আশা করব, বাজুস আরও সামনে এগিয়ে যাবে। বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের কারণে এ পর্যন্ত তিনটি মেলা আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি; যা এর আগে জুয়েলারি ব্যবসায়ী কখনো চিন্তা করতে পারেনি। মেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও বাজুসের ট্রেজারার উত্তম বণিক বলেন, তিন দিনে অনুষ্ঠিত ১০টি সেমিনারে যেসব পরামর্শ এসেছে, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে সোনার অলংকার রপ্তানিসহ দেশে সোনার ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন বাজুস ফেয়ার গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে চলে গতকাল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে মেলা। এবারের বাজুস ফেয়ারে ৯টি প্যাভিলিয়ন, ১৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৫টি স্টলে দেশের ঐতিহ্যবাহী ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। জুয়েলারি এক্সপোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়সহ আকর্ষণীয় অফারে গহনা ও ডায়মন্ড বিক্রি করেছে। তিন দিনের ফেয়ারে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। দেশ-বিদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা এতে অংশ নেন। জুয়েলারি শিল্প নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথমবারের মতো নয়জন সাংবাদিককে গোল্ড মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করেছে বাজুস। ফেয়ারের মাধ্যমে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া নিত্যনতুন ডিজাইনের অলংকারের পরিচিতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। ফেয়ার প্রাঙ্গণে প্রতিদিন জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়ন, রপ্তানি, আধুনিকায়ন, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোট ১০টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এসব সেমিনারে জুয়েলারি খাতের উদ্যোক্তাগণ ছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মতামত দেন। এরআগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রফেসর ইমেরিটাস চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, ইউনেস্কো আর্টিস্ট ফর পিস ও বিশ্ব বরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলসহ অতিথিদের নিয়ে ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। এসময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আহমেদ ইব্রাহিম সোবহানসহ বাজুস নেতৃবৃন্দ। এদিকে গতকাল তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘অলংকারের মান নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি এম এ হান্নান আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এবিজি বসুন্ধরার পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাজুসের সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু, ডায়মন্ড বিশেষজ্ঞ তানভির আল মাহমুদ খান। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘স্বর্ণশিল্প অনেক বিশাল এবং দীর্ঘদিনের। এখন টেস্টিং ল্যাবরেটরির (হলমার্ক করার) সক্ষমতা আছে কি না, সেটা আমাদের বের করতে হবে। এটা ফ্রি স্টাইলে হতে পারে না। আপনি সোনা বিক্রি করবেন, আবার আপনিই সার্টিফিকেট দেবেন এটা হতে পারে না। এ জন্য সরকারের দায়িত্ব আছে, শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের বাজারে, ভোক্তাদের না ঠকিয়ে সঠিক মানের পণ্য যাতে বিক্রি করা যায়, আস্থার জায়গাটা ফিরিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টাই বাজুস করছে। এ জন্য বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ ‘স্বর্ণ নীতিমালা বাস্তবায়ন ও অলংকার রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বাজুসের সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জাফর উদ্দীন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শরীফ মোশাররফ হোসেন, অর্থনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, বাজুসের সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসান, বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, জয়দেব সাহা প্রমুখ।

রাজস্ব সম্ভাবনা ও যৌক্তিক কর কাঠামো নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. দিলীপ রায়, আনোয়ার হোসেন, এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ, এফবিসিসিআইর সিনিয়র অতিরিক্ত সচিব শাহ মো. আবদুল খালেক, জাতীয় কর আইনজীবী ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট ড. মো. নুরুল আজহার শামীম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাশরুর রিয়াজ।

সর্বশেষ খবর