রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

মানুষ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে ভয় পায়

জোনায়েদ সাকি

হাসান ইমন

মানুষ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে ভয় পায়

গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশে একনায়কতন্ত্র শাসনব্যবস্থা চলছে। এ ধরনের শাসনের বড় অস্ত্র হচ্ছে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় ও ত্রাস সৃষ্টি করা। আরেকটা অস্ত্র হচ্ছে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এই দুটো অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার হতে দেখেছি। মানুষ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে তখনই যখন একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হবে। মানুষ কোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক দলে নিরাপত্তার অভাবে আসছে না। সরকার বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর যে দমন-নীপিড়ন চালাচ্ছে সেজন্য মানুষ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে ভয় পাচ্ছে। আর এতেই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এই বিষয়টা চিরস্থায়ী থাকবে না। এটা দেশকে নৈরাজ্য বা চরমপন্থার দিকে নিয়ে যাবে। আর না হয় মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভয় মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে। আমরা সেই পথে আছি। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এবারও বলা হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম জোট মিত্র, মহাজোট মিত্র কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুভব করলেন না। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগ যখন তাদের নিজের দলের লোককে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিল। যেটা তাদের গঠনন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তারপরও দেখলাম ভোট বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবার সামনে ব্যালটে সিল মেরে ভরাট করেছে। আর যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে সেখানে যে যার মতো করে কেন্দ্র দখল করে ব্যালট ভরাট করেছে। ভোট যে কারচুপি হয়েছে তাদের দলের নেতারাই অভিযোগ করেছে। একই সঙ্গে আমরা দেখেছি সহিংসতা। নির্বাচনের আগে ও পরে ১৩ জন মানুষ নিহত ও ৩ শতাধিক আহত হয়েছে। সুতারং বলা যায়, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, একক নির্বাচনের পর আবার তারা সরকারে এসে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। এ ধরনের ক্ষমতায় জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা তো জনগণের প্রাধিকার বা ভোটের মাধ্যমে আসেনি। যখন জনগণের ম্যান্ডেট থাকবে না তখনই রাষ্ট্রীয় শক্তি নিজেদের করে জনগণের মুখোমুখি করে। আর সেই কাজটি এই নির্বাচনের আগে ব্যাপকভাবে দেখেছি। যেহেতু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করে তখন আন্তর্জাতিক পরিসরে সরকার নতজানু হয়ে পড়ে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে নিজের স্বার্থ বিকিয়ে হলেও ক্ষমতা রক্ষায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। গত ১৫ বছর দেখেছি, আর সেটার পূর্ণরূপ এবার দেখেছি। জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের ছায়াতলে থেকে একটি গোষ্ঠী ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংক লুটপাট ও টাকা পাচার করছে। দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এবং ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। এর ফলে মানুষের জীবন নাকাল হচ্ছে। কিন্তু যারাই এসবের সঙ্গে জড়িত সরকার সে চক্রকে সুবিধা দিতে কাজ করছে। ফলে জনগণের যে খারাপ অবস্থাই হোক না কেন তাদের দিকে তাকাবে না। শুধু তাই নয় রাজনৈতিক ছায়াতালে থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী অপকর্ম করে যাচ্ছে। ধর্ষণ এখন ট্রেন্ড হয়ে যাচ্ছে। আর এর সঙ্গে জড়িতরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক ছায়াতলে অবস্থান করছে। সামাজিক স্তরেও ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। এই শাসনব্যবস্থা বদলানোটা জনগণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আমরা সেই লড়াইয়ের মধ্যে আছি। জোনায়েদ সাকি বলেন, যার উদাহরণ গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। অন্তত ৯০ ভাগ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। শুধু বিরোধীরা নয়, সরকারদলীয় লোকেরাও ভোট দিতে যায়নি। কেননা, তারা একটা অন্যায় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে যায়নি। জনগণের দিক থেকে একটা নৈতিক শিক্ষার সংরক্ষণ হয়েছে, যেটা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোকে ভেঙে ফেলা এবং নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসে নির্বাচনে আনা, সেটাও সফল হয়নি। এটাও একটি নৈতিক শক্তির সঞ্চার হয়েছে। এটার ওপর ভিত্তি করে মানুষের নীরব প্রতিবাদ, যেটা আসলে গণপ্রতিরোধের একটা সূচনা। এটার ওপর ভিত্তি করে আমাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে চাই। যতই প্রতিকূলতা আসুক না কেন আমরা এগিয়ে যাবই। আর গণসংহতি আন্দোলন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সে কাজ করে যাচ্ছে। জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষের আশা ছিল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার জনগণের দাবি মানতে বাধ্য হবে। সরকার সে দাবি মানেনি বরং একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নবায়ন করেছে। এখন ক্ষমতায় টিকে আছে। ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের নৈরাশ্য তৈরি হতেই পারে। আন্দোলনের ওপর যে দমন-পীড়ন হয়েছে, সেটা পুনর্গঠিত করতে কিছুটা সময় লাগবে। এটা অনিবার্য একটা বাস্তবতা। ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক রয়েছে। কিন্তু মানুষ আবার জেগে উঠবে।

সর্বশেষ খবর