সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত

আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর তুরাগতীর

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর তুরাগতীর

দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম আসর। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ আহমদের বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ। গতকাল বেলা ১১টা ১৭ মিনিট থেকে শুরু করে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত ২৬ মিনিট মোনাজাত স্থায়ী হয়। মোনাজাতের সময় ছিল পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে। ২৬ মিনিটের মোনাজাতের প্রথম প্রায় ১০ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো আরবিতে উচ্চারণ ও পরে উর্দু ভাষায় দোয়া করেন। মুঠোফোনে এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখো মানুষ একসঙ্গে হাত  তুলেছেন মহান আল্লাহর দরবারে। গুনাহগার, পাপী-তাপী বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন। মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হিদায়াত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাতের সময় আমিন আমিন ধ্বনিতে পুরো টঙ্গী এলাকা এক পবিত্র আবহের সৃষ্টি হয়। এর আগে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই গাড়িতে, হেঁটে, ট্রেনে, নৌকায় ইজতেমায় হাজির হতে থাকেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ। ইজতেমা ময়দান আগে থেকেই পরিপূর্ণ থাকায় তারা আশপাশের সড়ক, ফুটপাত ও বিভিন্ন বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন।

বয়ান করলেন যারা : গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মুফতি মাকসুদ, তা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আবদুল্লাহ। পরে সকাল ১০টার দিকে হিদায়াতের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, বাংলা তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। হিদায়াতের বয়ান শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের শুরা ফয়সাল সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম প্রায় এক মিনিট গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। এরপর আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

বিদেশি মেহমান : ইজতেমার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এবারের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় বিশ্বের ৫৯ দেশের ৬ হাজার ৩৫১ জন মেহমান অংশ নেন। তবে গতকাল সকালে বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, সর্বশেষ ৬৫টি দেশের ৯ হাজার ২৩১ জন বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। এর মধ্যে ইংলিশ ২ হাজার ৬১৫, পশ্চিমবঙ্গ ২ হাজার ৭৫৯, উর্দু ২ হাজার ৬৬২, আরব ৭৩২ জন, বিদেশি শিক্ষার্থী ১৯০, এক্সপেট্রিয়েট (বিদেশে বসবাসের উদ্দেশ্যে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা) ২৭৩।

মোনাজাতে নারীদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে পুরুষদের পাশাপাশি ইজতেমা ময়দানের চারদিকে বিভিন্ন অলি-গলি ও রাস্তার পাশে, ময়দানের আশপাশ, কল-কারখানা, বাসা-বাড়ির ছাদে বসে নারীদেরও ইজতেমার মোনাজাতে শরিক হতে দেখা গেছে।  মোনাজাতে শরিক হতে বাদ পড়েনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পুরুষ ও নারী সদস্যও।

৮ মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে রবিবার পর্যন্ত ৮ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ইজতেমা ময়দানে সাতজন ও ময়দানে আসার পথে একজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন, ঢাকার বংশালের মুনতাজ উদ্দিন (৭৮), সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের জালাল মন্ডল (৬০), জামালপুরের ইসলামপুরের নবীর উদ্দিন (৬০), শেরপুরের আবুল কালাম (৬৫), নেত্রকোনার কেন্দুয়ার আবদুল হেলিম মিয়া (৬২), দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের জহির উদ্দিন (৭০) ও লক্ষ্মীপুরের রামগতির আবুল কাসেম (৬৫)। ইজতেমায় আসার পথে আবদুল্লাহপুরে বাসের ধাক্কায় আবুল কাসেম মারা যান। সর্বশেষ মৃত ব্যক্তি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার চারাতোলা গ্রামের মৃত কাবিল হোসেনের ছেলে হারন অর রশীদ (৬৫)। রবিবার ভোররাত ৩ টার দিকে ইজতেমা ময়দানে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।

সর্বশেষ খবর