টানা আন্দোলনে হযবরল অবস্থায় দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান উপাচার্য শিরীণ আখতারের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে চার মাস ধরে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। এর মাঝে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক-ছাত্রদের টানা আন্দোলনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অবস্থা যখন নড়বড়ে, ঠিক তখনই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল পদত্যাগ করেছেন দুই সহকারী প্রক্টর।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, ‘ভিসি যদি কোনো দুর্নীতি করে থাকেন সেখানে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। এক্ষেত্রে তার উপরস্থ বডি আছে যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, সিন্ডিকেট এবং মহামান্যের দফতর ভিসিকে তাঁদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আমি তাঁর কাছে জবাবদিহি চাইতে পারি না।’আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে বিতর্কিত এ প্রশাসনের প্রতি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছে। উপাচার্য আসলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার সক্ষমতা হারিয়েছেন। ওনার নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে গেছে। তাই ওনার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র শিক্ষক মাঠে রয়েছেন।
জানা গেছে, উপাচার্য শিরীণ আখতারের পদত্যাগের দাবিসহ নানান দাবিতে আন্দোলন-কর্মসূচি দিয়ে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া লাগাতার আন্দোলনে উপাচার্য শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-অসঙ্গতি, স্বেচ্ছাচারী কার্যক্রম ও চরম প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাসহ নানান অভিযোগ আনা হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য কৌশলে শিক্ষকদের আন্দোলনকে উপেক্ষা করছে। চল-চাতুরী করে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ’৭৩-এর আইনকে অমান্য করে সিন্ডিকেটকে একটি পর্ষদে পরিণত করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ অর্থ লেনদেন, প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের পদত্যাগ চায় শিক্ষক সমিতি। গত ৩১ জানুয়ারি চবির রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠে একই বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ দুই দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি দুটি হলো- অভিযুক্ত শিক্ষককে ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে ওই শিক্ষককের বিরুদ্ধে মামলা করা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা থেকেও বিরত থাকছেন তারা। শিক্ষক-ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যেই গতকাল পদত্যাগ করেছেন দুই সহকারী প্রক্টর ড. মো মোরশেদুল আলম ও অরূপ বড়ুয়া। তারা চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদের বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। দুজনই ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে পত্রে উল্লেখ করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে দুজনইে পদত্যাগ করেছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ বলেন, ‘সকালে দুজন সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগপত্র পেয়েছি। উপাচার্যের নির্দেশের পর পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে।’ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রক্টরিয়াল বডির চরম দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা ও প্রশাসনিক দেউলিয়াত্বের অনেক নজির সৃষ্টি হয়েছে। রসায়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম বলেন, আমরা এ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত কী আসে আমরা তা দেখব। বিচার সুনিশ্চিত না হলে আমরা আর ভদ্র আচরণ করব না। সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তালা ঝুলিয়ে দেব।