সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এক খুনে ২৮ খুনি

আলী আজম

২০২০ সালের ৫ মার্চ। সুনামগঞ্জ সদর থানার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ডাকবান হাওরের শিংগীদাইড় নামক স্থানে কাড়া (ছোট নালা) দেখার জন্য জমিতে যান আলীম তালুকদার। তখন বিকাল ৪টা। দেখেন স্থানীয় ফারুক মিয়া, কাদির, নূর আলী, শুকুর আলী, জয়নাল, নজরুলসহ আরও ১০-১২ জন বাঁধ কেটে মাছ ধরার জন্য পানি সেচ করছে। তখন আলীম তাদের পানি সেচ করে মাছ ধরতে নিষেধ করেন। এ সময় আলীমের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে যারা পানি সেচ করছিল তারা কৌশলে আলীমকে রাত ৮টার দিকে ডাকবান হাওরের বাঁধে ডেকে নেন মাছের ভাগ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে। তাদের কথামতো রাতে আলীম ডাকবান হাওরে মাছের ভাগ আনতে যান। এ সময় নূর আলী, জয়নাল, নজরুল, ফারুক, শুকুর আলী, কাদির, মমিনুল, জসিম, মাহমুদ আলী, কুদ্দুস, মানিক, রুহুল ও কনররা আলীমকে আটক করে এলোপাতাড়ি কিলঘুসি মারতে মারতে মনোয়ার হোসেন মহাজনের খলায় নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর আলীমকে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে পেটায়। নিচে ফেলে একজন বুকের মধ্যে পা দিয়ে চাপিয়ে ধরে, দুজন আলীমের দুই হাত ধরে রাখে। আলীমের পায়ের পাতা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক পিটিয়ে হাড় ভাঙাসহ মারাত্মক জখম করে। পরে স্থানীয় হামিমের মাধ্যমে আলীমকে মারধরের সংবাদ পান তার মা মোছা. গোলাপী বেগম। রাত ১০টার দিকে বরনই বিলের মহাজন মনোয়ারের খলায় গিয়ে আলীমকে একটি চেয়ারে নিস্তেজ অবস্থায় দেখতে পান। তখন আরেকটি চেয়ারে বসা ছিলেন মনোয়ার মহাজন। আলীমকে কেন ধরে নিয়ে এসে এ অবস্থা করা হয়েছে মনোয়ার মহাজনের কাছে জানতে চান তার মা গোলাপী। কিন্তু মনোয়ার কোনো উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে একটি সিএনজিতে আলীমকে উঠিয়ে দেন। তাকে সুনামগঞ্জ সদর থানার দড়িয়াবাজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের কাছে আলীম ঘটনার বিবরণ দেন। আলীমকে ৬ মার্চ সকালে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। ৭ মার্চ সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলীমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৮ মার্চ সুনামগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত আলীম তালুকদারের মা মোছা. গোলাপী বেগম। মামলাটি একে একে তদন্ত করেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই মো. আমির হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক কাজী মোক্তাদির হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ইকবাল বাহার। সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআই সিলেট জেলার এসআই মো. শাহ ফজলে আজিম পাটোয়ারী। তিনি জানান, মামলার সার্বিক তদন্তে, প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে, মৃত আলীম তালুকদারের সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, জব্দ তালিকা পর্যালোচনায়, আসামি ফারুক মিয়া ও হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিবুর রহমানের জবানবন্দি পর্যালোচনায়, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় এবং তদন্তে প্রাপ্ত অপরাপর তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে মামলার ঘটনাটি এজাহারনামীয় আসামি সৈয়দ মো. মনোয়ার, জয়নাল মিয়া, ফারুক মিয়া, মো. জসু মিয়া ওরফে জসিম উদ্দিন, সুরুজ আলী, ফয়জুর রহমান, আবদুল কাদির, জহুর আলী, নজরুল, শুকুর আলী, নূর আলী, মাহমুদ আলী, মমিনুল ইসলাম, আজিবুল আলী, পারভেজ মিয়া, হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিবুর রহমান, মানিক মিয়া, মুনসুর, ফজর আলী, রুহুল, কনর মিয়া বাবুর্চি, কুদ্দুস, আবু মিয়া, দ্বীন ইসলাম, মো. সাগর মিয়া, হোসেন আহমদ, অমর চান দাস ওরফে টকন ও আজর আলীর ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে আলীম তালুকদারকে খুনের ঘটনায় ২৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর