মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাণিজ্য মেলায় কমেছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান

♦ বিদেশি ক্রেতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেই, মত বিশ্লেষকদের ♦ ভিসা-কাস্টমস জটিলতায় অংশগ্রহণ কম, বলছে ইপিবি

শাহেদ আলী ইরশাদ

বাণিজ্য মেলায় কমেছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান

বিদেশে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কমেছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ। আয়োজকরা বলেছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ভিসা ও পণ্য আনার জন্য পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় অংশ নিতে পারেনি। বিদেশি ক্রেতা বাড়ানোর তেমন উদ্যোগ নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে তাদের পণ্যের মান নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দেখা যায় বিদেশি পণ্যের। প্রদর্শন করা হয় ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড আর ইরানের পণ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পাঁচটি দেশের ৯টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। যা গতবারের তুলায় অর্ধেক। গত বছর বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছিল ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান। এবারের মেলায় অংশ নেওয়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান নিয়েও অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাণিজ্য মেলায় বিদেশি ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। যে কারণে তারা খুব একটা আসছেন না। ফলে অর্থনীতিতে তেমন বড় কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগও নেই। বাণিজ্য মেলায় এখন দেশি ক্রেতার সমাগমই বেশি। মেলায় আসা দর্শনার্থী রাবেরা বেগম বলেন, যেসব পণ্য দেখানো হয়েছে, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমাদের দেশেই তৈরি, কিন্তু বলা হচ্ছে বিদেশি। আমিনুল ইসলাম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, মান অনুযায়ী বিদেশি পণ্যের দাম একটু বেশিই চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক আর ইরানের পণ্য দেখেছি। এসবের বাইরে আর কোনো বিদেশি দোকান চোখে পড়েনি। ক্রেতাদের অভিযোগ- এবারের বাণিজ্য মেলায় থাইল্যান্ড কিংবা চীনের ব্যবসায়ীদের নামে দোকান বসানো হলেও সেগুলোর মালিক বাংলাদেশিরা। এসব প্রতিষ্ঠান ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে পণ্য এনে এ দেশে বিক্রি করে। মেলায় স্টল নিয়ে তারা এসব পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। বাণিজ্য মেলায় অংশ নেওয়া পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আমি বাংলাদেশেই থাকি, চাকরি করি, বছরে একবার মেলায় আসি আমাদের প্রচারের জন্য। আলী হোসেন নামে আরেক দোকানি বলেন, ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে এ বছর থাইল্যান্ডের কোনো প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়নি। কয়েক বছর ধরে মেলায় থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও এবার দেশটির কোনো ব্যবসায়ী আসেননি। চীনা পণ্যের দোকানের বিক্রয় কর্মী বলেন, এবারের মেলায় চীনের কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। আমরা চীন থেকে পণ্য এনে বিক্রি করছি। তবে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্কসহ যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে, বিক্রি কম হওয়ায় তারা হতাশ। ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছে তারা। বলছে, গত মেলায় যে পরিমাণ ক্রেতা ছিল, এবার তার চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কম। ফলে বেচাকেনাও কম হচ্ছে। সব পণ্য বিক্রি করতে না পারলে লোকসান হতে পারে আমাদের। তবে পুরো মাসের তুলনায় শেষ দিকে এসে মেলায় বেচাকেনা কিছুটা হলেও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে পণ্য আনার জন্য কাস্টমস ছাড়পত্র থেকে শুরু করে ভিসা জটিলতা যেসব থাকে, এগুলো নিয়ে হয়তো কিছুটা অনিয়শ্চতা ছিল। এ কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ আমাদের কাছে তুলনামূলক কম মনে হয়েছে। রাজধানী ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শন কেন্দ্রে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২০২২ সালের আগ পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে শেরে বাংলা নগর এলাকার একটি মাঠে। দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও দিন দিন মেলায় বিদেশিদের অংশগ্রহণ কমছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর