মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ব্যবসায় পরিণত করা হয়েছে রাজনীতিকে

সাইফুল হক

শামীম আহমেদ

ব্যবসায় পরিণত করা হয়েছে রাজনীতিকে

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, রাজনীতিটা এখন আর জনকল্যাণে নেই। পুঁজিবাদী দলগুলো রাজনীতি ও নির্বাচনকে ব্যবসায় পরিণত করেছে। আর অন্য কোনো ব্যবসায় রাতারাতি এত অর্থবিত্ত বানানো সম্ভব নয়। রাজনীতির এই অধঃপতনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা আমাদের পক্ষে সত্যিই কঠিন। তাই অনেকটা উজান ঠেলার মতো করে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করার চেষ্টা করছি। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে একটা গণআন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করছি। কোনো চাপ বা প্রলোভনের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিইনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সময়ের সঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির তাল মিলিয়ে চলতে পারা সম্পর্কে তিনি কথাগুলো বলেন। সরকার পতন আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাশকতার দায় চাপিয়ে দেওয়ার যে তৎপরতা, সেটাকে এড়িয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে গণজোয়ার তৈরি করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা করছি। কিন্তু, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে এতটা অর্থবিত্ত করেছে যে, তারা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি দলের সঙ্গে একাত্ম। এ ছাড়া এমন একটা প্রবল রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে যে ধরনের কর্মকৌশল নেওয়া দরকার, সেটা আমরা নিতে পারছি না। শুধু গত বছর একবার আগস্টে, আরেকবার অক্টোবরে লাখ লাখ মানুষ সরকারকে বিদায় জানাতে ঢাকাতে এলো, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সর্বাত্মক কর্মসূচি চাচ্ছিল, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার প্রবল ইচ্ছা তাদের মধ্যে ছিল, কিন্তু প্রধান নেতৃত্ব রাজপথে থাকা থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। এই বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদী মানুষকে একপ্রকার বেকার বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ঢাকা শহরজুড়ে বড় একটা লড়াই গত কয়েক বছরে করতে পারিনি। এটা যতটা না জনগণের দিক থেকে, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক দিক থেকে সিদ্ধান্তহীনতা, কর্মকৌশলে অতি সাবধানি মনোভাবের কারণে হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে নেমে কার্তুজের হিসাব করলে সেই যুদ্ধে জয়লাভ করা যাবে না। ঝুঁকি নিতেই হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। তবুও মানুষ ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জন করে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাকি কাজ রাজনৈতিক দলগুলোর। আগামীতে নতুন করে আন্দোলন পুনর্গঠিত হবে। আশা করি আগের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগবে। জনদাবি নিয়ে করা আন্দোলনেও মানুষের সম্পৃক্ততা কম থাকা প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষ নিজেদের অনেক অসহায় ও বিপন্ন মনে করছে। ভাবছে ছোটখাটো প্রতিবাদ করে কী হবে? সম্ভবত অতিরিক্ত সতর্কতা, ভয়, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে রাজপথে নেমে প্রতিবাদে শামিল হওয়ায় অনীহা। আন্দোলনে নামলে চিহ্নিত হয়ে যান কি না, চাকরি বা ব্যবসার ক্ষতি হয় কি না- এমন নানা ঝুঁকি বিবেচনা করে অনেকে চুপ থাকছেন। লুটপাট ও বাজার পরিস্থিতির কারণে অসংখ্য মানুষ পরিবার নিয়ে কষ্টে আছে। মানুষের খাদ্যগ্রহণ কমে গেছে। কষ্ট করছেন, ভুক্তভোগী হচ্ছেন, তবুও চুপ থাকছেন। তবে দুই দিন আগে বা পরে কোথাও একটা ধাক্কা লাগবে। তখন মানুষ বাঁচার প্রয়োজনেই রাস্তায় নামবে। যে কোনো সময় রাজপথে মানুষের এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা আছে। রাজনৈতিক দল থাকলে এই বিস্ফোরণ ইতিবাচক আন্দোলনের জন্ম দেয়। অন্যথায় ভাঙচুর, জ¦ালাও-পোড়াওয়ের মতো নৈরাজ্যের জন্ম দেয়। বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলো অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ। আগামীতে হয়তো এই পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাব।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পার্টির ভূমিকা প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, আমাদের দেশব্যাপী সংগঠনের বিস্তৃতিতে সীমাবদ্ধতা আছে, আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। তবুও সামর্থ্য অনুযায়ী গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমাদের আন্দোলন গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য, ভোটের জন্য, ভাতের জন্য; আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন প্রতিটি বিষয় নিয়ে পার্টিগতভাবে ও গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে জোটগতভাবে আন্দোলন করছি, তাই মানুষের নৈতিক সমর্থন পাচ্ছি। কিন্তু, অভিজ্ঞতাটা হচ্ছে মানুষ মনে করছে তাদের সংকটের সমাধান রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের মাধ্যমে করে দেবে। তারা সরাসরি আন্দোলনে নামছে না। অনেকে আসছেন, তবে কম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাহবা দিতেই তারা বেশি অভ্যস্ত।

দলের বিস্তৃতি ও টিকে থাকা প্রসঙ্গে এই বাম রাজনীতিক বলেন, আমরা নিবন্ধিত দল। জ্যামিতিক হারে আমাদের সংগঠন হয়তো বাড়েনি, কিন্তু গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমানুষের দাবির সঙ্গে থাকায় আমাদের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কোনো চাপ বা প্রলোভনের কাছে আমাদের পার্টির নেতৃত্ব নিজেদের বিকিয়ে দেননি, এটা মানুষের মধ্যে একটা ভরসার জায়গা তৈরি করেছে। আমাদের ন্যায্য আন্দোলনকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নিতে পারলে, বিজয় অর্জন করতে পারলে পার্টির জনসম্পৃক্ততা ও কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, ৭ জানুয়ারির যে অভিজ্ঞতা, তাতে দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এমন একটা কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা জিতে আসাটা অসম্ভব ব্যাপার। রাজনৈতিক ও নৈতিক কারণেই এখন পর্যন্ত দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর