মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফাগুনের বার্তায় ভিন্ন আবহ

মোস্তফা মতিহার

ফাগুনের বার্তায় ভিন্ন আবহ

কোকিলের কুহুতানে মুখরিত স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তীর্ণ প্রান্তর। বসন্ত আসার আগেই ফাগুনের আগমনী বার্তায় ভিন্ন এক আবহ তৈরি হয়েছে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। আর সেই সঙ্গে ছন্দে ছন্দে বইকেনায় অনন্য সুষমা ফুটে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলাজুড়ে।

এদিন প্রায় সব প্যাভিলিয়নেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। কর্মমুখর দিনে দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের যেরকম ভিড় থাকার কথা সোমবার ১২তম দিনে অমর একুশে বইমেলার ভিড় ছিল তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিটা বেশি ঘটেছে বলে জানান প্যাভিলিয়নে কর্মরতরা।

বিকালে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে কথা হয় রাজধানীর বাড্ডা থেকে আগত বইপ্রেমী লিপি আক্তারের সঙ্গে। দুই মেয়ে বন্যা ও বর্ষা এবং এক ছেলে জুম্মনকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন এই গৃহিণী। মেলা কেমন লাগছে জানতে চাইলে লিপি আক্তার বলেন, প্রতি বছরই মেলায় আসি। সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে এবারও এলাম। এসে খুবই ভালো লাগছে। বাচ্চাদের জন্য কার্টুন, ছড়া ও সায়েন্সফিকশনের বই আর নিজের জন্য উপন্যাস কিনি। কথা প্রসঙ্গে এই বইপ্রেমী জানান, নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরও এখনো তিনি হুমায়ূন আহমেদের বই কিনেন। হুমায়ূন আহমেদের যে কয়টা বই সংগ্রহ করা বাকি ছিল সেগুলো কিনেছেন বলে জানালেন তিনি।

এদিকে, প্যাভিলিয়নগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকলেও স্টলগুলো বলতে গেলে প্রায় ফাঁকা ছিল। স্টল বরাদ্দ পাওয়া ইন্তামিন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এ এস এম ইউনুস বলেন, লোকজন মেলায় আসে ঠিকই কিন্তু স্টলে আসে না। প্যাভিলিয়নের কারণে স্টল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমি চাই আগামী বছর থেকে যেন প্যাভিলিয়ন সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পারিজাত প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শওকত হোসেন লিটু আক্ষেপ করে বলেন, ২০১৬ সালে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেছিলেন, মেলার স্টল বিন্যাসকে পুরোপুরি ডিজিটাল করা হবে। কিন্তু আট বছর পার হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত মেলার স্টল বিন্যাসকে ডিজিটাল করা হয়নি। যার কারণে অনেক দর্শনার্থী মেলায় এসে ভোগান্তির শিকার হন। এ বিষয়ে আমরা বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে বহুবার অনুরোধ করার পরও তারা আমাদের কথা কর্ণপাত করছেন না। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশ দিয়ে মেলায় প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হলেও সেখানে গেট না রেখে বাঁশ দিয়ে প্রবেশ মুখ তৈরি করা নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেন শওকত হোসেন লিটু।

গতকাল ১২তম দিনে অমর একুশে বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১১৫টি।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি, হেনা দাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবাইদা নাসরীন।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঝর্ণা রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতার। আলোচনা পরবর্তী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন আলতাফ হোসেন, সাজ্জাদ আরেফিন, ওমর কায়সার, ইউসুফ রেজা, আসাদ কাজল, শাহেদ কায়েস এবং সারমিন মতিন মিতু।

আবৃত্তি করেন কাজী মদিনা, পলি পারভীন, জালালউদ্দীন হীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্পর্শ ফাউন্ডেশন’, আবৃত্তি সংগঠন ‘কথা আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র’ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘হাওলা’। একক সংগীত পরিবেশন করেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া, সাইদুর রহমান বয়াতি, জহির আলীম, আবুল বাসার আব্বাসী এবং বশির উদ্দিন সরকার।

সর্বশেষ খবর