মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংসদের পর উপজেলাও বর্জন

বিএনপিসহ ১৭ দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। গত সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর দলের হাইকমান্ড। শুধু বিএনপি নয়, ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ১৭ দল আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দলগুলোর অভিযোগ, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ নয়। সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা নেই। এজন্য ভোটার ও নেতা-কর্মীরাও আগ্রহ হারিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচনের দাবি আদায়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্নের পর এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বিপর্যস্ত বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নিজেদের আত্মরক্ষায়। মামলা-হামলা আর কারা নির্যাতন শেষ করে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মুহূর্তে আরেকটি নির্বাচনের কর্মযজ্ঞে যাওয়ার পরিকল্পনা যেমন বিএনপির নেই, তেমনি নতুন করে মামলা-হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার ইচ্ছাও তাদের নেই। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও যাবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ফলে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তারা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন বলে জানান।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করতে যাওয়া নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে- বিএনপি, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, সিপিবি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা এনডিএম, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি (রব), বাসদ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), গণফোরাম এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী)। দলগুলোর নেতারা জানান, উপজেলা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। ভোট বর্জনের পথেই হাঁটছে সরকারবিরোধী মিত্ররা। অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল তারা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে আন্দোলনে দৃষ্টি রাখছে সমমনা দল ও জোটগুলো। একই সঙ্গে বিএনপির ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই সামনের দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি দল ও জোটকে সুসংগঠিত করতে মনোযোগ দিচ্ছেন। নিবন্ধন থাকলেও মাঠের রাজনীতিতে অনেক দলেরই তেমন পরিচিতি নেই। ফলে উপজেলা নির্বাচনসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বিএনপির ওপরই ভরসা করছে দলগুলো।

এ প্রসঙ্গে এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে একদলীয় শাসনতন্ত্র কায়েম করেছে। তাই বিএনপিসহ আমরা যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছি। জাতীয় নির্বাচন বয়কট করেছি। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও কোনো আগ্রহ নেই। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আমরা পার্টিগতভাবে অংশ নেব না। গণতন্ত্র মঞ্চও পার্টিগতভাবে অংশ নেবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও দাওয়াহ-বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, এ সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনেও আমরা যাব না। ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর