বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

৪০ কেজি ওজনের পাখি মাছ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

৪০ কেজি ওজনের পাখি মাছ

বগুড়ার গাবতলীতে বসেছে প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। গতকাল মেলায় আনা হয় হরেক প্রজাতির বিশালাকৃতির মাছ। এ মেলাকে ঘিরে শতাধিক গ্রামজুড়ে চলছে অতিথি আপ্যায়ন ও আনন্দ উৎসব। এক দিনের মেলাকে ঘিরে গাবতলী উপজেলাসহ আশপাশের পাঁচটি উপজেলায় চলছে উৎসবের আমেজ। দিনব্যাপী পোড়াদহ মেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে মাছের মেলায় লাখো মানুষের পদচারণে মুখরিত ছিল। এবার মেলায় সবচেয়ে বড় ৪০ কেজি ওজনের পাখি মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা; যা প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা করে। জানা যায়, মেলা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী ২০ গ্রামে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পরিণত হয়েছে মিলনমেলায়। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে একটি বটবৃক্ষ তলে আয়োজন করা হতো সন্ন্যাসী মেলা। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার অনুষ্ঠিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলায়। নদী-তীরবর্তী স্থানে এই মেলায় নানা প্রজাতির মাছের আমদানি হতে শুরু করে। এক সময় তা মাছের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একপাশে বসেছিল গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশেষ করে মসলাপাতির দোকানপাট। অন্য পাশে ছিল কাঠের আসবাবপত্রের দোকান। সেই সঙ্গে হরেকরকমের মিষ্টির দোকান রয়েছে। মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছপট্টিতে বিশালাকৃতির দেশি প্রজাতির বড় বড় চিতল, বোয়াল, রুই, কাতলা ও শোল মাছ। মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাকে স্থানীয় ভাষায় জামাই মেলা বা মাছের মেলা বলা হয়। সে কারণে আশপাশের গ্রামগুলোতে মেয়ে ও জামাইদের নিমন্ত্রণও করা হয়। জামাইরা বড় বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়াটাই এ এলাকার ঐতিহ্য। মেলা ঘুরে দেখা যায়, ৪০ কেজি ওজনের সবচেয়ে বড় সাইজের পাখি মাছ কক্সবাজার থেকে এনেছেন টাঙ্গাইলের শরীফ তালুকদার। তিনি প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা হিসেবে মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন। মাছ ব্যবসায়ী আবদুল বাছেদ ২৫ কেজি ওজনের ব্লাক কার্প মাছের দাম চেয়েছেন প্রতি কেজি ৯৫০ টাকা। এ ছাড়া যথারীতি রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, বিগ হেড, ব্লাড কার্প, আইড়, সিলভার কার্প ও কার্পসহ সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ উঠেছে। মাছের আড়তদার আতিকুল ইসলাম জানান, মেলায় বড় মাছের চাহিদা থাকায় তিনি এবার দেশি প্রজাতির বড় বোয়ালসহ পাঙ্গাশ মাছ তুলেছেন। মাছ কিনতে আসা রমজান আলী জানান, ৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনেছেন। আত্মীয়-স্বজনদের এই মাছ দিয়ে আপ্যায়ন করাতে পারবেন ভাবতেই তার আনন্দ হচ্ছে। মেলায় মাছ ছাড়াও শিশুদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রীসহ রয়েছে হরেকরকমের খাবারের দোকান। এ ছাড়াও প্রসাধনী সামগ্রীর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানও রয়েছে। এবারও ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ স্থানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তীর্থস্থান স্বরূপ। শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের মেলাটি এক দিনের হলেও আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাই উৎসব চলে তিন দিন। আজ পোড়াদহ মেলার স্থানে বউ মেলা বসবে বলেও আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর