শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
দলীয় প্রতীক না থাকায় উদ্দীপনা । উপজেলা নির্বাচন

বিএনপির কেন্দ্রের ‘না’ তবে আগ্রহী তৃণমূল

দলের কেউ প্রার্থী হলে নিরুৎসাহ করা হবে না

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিএনপির কেন্দ্রের ‘না’ তবে আগ্রহী তৃণমূল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। তবে দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে আগ্রহী তৃণমূলের অনেক নেতা। তাই দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে নিরুৎসাহ করা হবে না। দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি। শিগগিরই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এ নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পরে দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ যেমন সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও বর্জন করার পক্ষে, আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এ নিয়ে শীর্ষ ফোরামে আলোচনা হয়েছিল বলেই হয়তো এই আলোচনা উঠেছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কথা জানান বিএনপির ওই নেতা।

জানা যায়, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে শতাধিক উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তৃণমূলের অনেক নেতার এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। এতে বিএনপির অনেক নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দলের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার জন্য এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। তিনি বলেন, যদিও এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না তবুও নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখা ও ঐক্য ধরে রাখার জন্য ভোট করছেন। উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

জানা যায়, বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক লাভ-ক্ষতি নিয়ে ভাবছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সরকার এর থেকে কী ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা পাবে। আর নির্বাচন না করলে বিএনপির রাজনৈতিকভাবে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে- এটা দলের আলোচনায় আছে। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে না করায় তাদের একাধিক প্রার্থী থাকছে। তাতে এ নির্বাচনে সরকারি দলের একতরফা প্রভাব থাকবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে ভালো করার সম্ভাবনা তারা দেখছেন। তারা এও বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পরপরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বিএনপিকে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে বিরোধীদের কাছ থেকে সরকারের ‘বৈধতা’ পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে। মনে হতে পারে, বিএনপি সরকারকে মেনে নিয়েছে। এর সুযোগ নেবে সরকার। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নেতাদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা এখনো দোলাচলে রয়েছেন।

মাঠপর্যায়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে দলের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার আগে অনেকেই প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে চান না। রাজবাড়ীর একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা তো আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই বিজয়ী হব ইনশা আল্লাহ। কিন্তু দল কী সিদ্ধান্ত নেয়, আগে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তাই বিএনপি জাতীয় নির্বাচন যেভাবে বর্জন করেছে উপজেলা নির্বাচনও সেভাবে বর্জন করবে। দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে আলোচনা না হলেও আমি যতটুকু জানি আগের সিদ্ধান্তই এখনো বলবৎ আছে।

 

সর্বশেষ খবর