শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ জাতীয়করণের খবর নেই

সরকারের নির্দেশনা থাকলেও ছয় মাসে কমিটি করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়

আকতারুজ্জামান

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ‘শিগগিরই’ দুটি কমিটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছয় মাসেও এ কমিটি করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয়করণ দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলন থামাতে গত বছরের ১ আগস্ট এ ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। দীর্ঘ সময়েও এর কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অসন্তোষে রয়েছেন।

বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণ দাবিতে গত বছরের ১১ জুলাই বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এ আন্দোলন শুরু করেছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। তাদের আন্দোলনে আশপাশ এলাকা অচল হয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ১৯ জুলাই তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আহ্বানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠকে দীপু মনি জাতীয়করণ ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি করার কথা জানিয়ে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান তাদের। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি ছিল পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা। দীপু মনি তখন শিক্ষকদের জানান, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে এমন ঘোষণা দেওয়া সম্ভব নয়। সব মিলে শিক্ষকদের দাবির প্রতিফলন না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা দীপু মনির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

পরে গত বছরের ১ আগস্ট সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে যান শিক্ষক নেতারা। সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও। বৈঠক থেকে জাতীয়করণের জন্য ব্যয় জানতে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি কমিটির আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষকরা। এসব কমিটিতে আন্দোলনকারী নেতাদেরও অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘জাতীয়করণ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিটিএ শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে অতিদ্রুত দুটি কমিটি করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি করা হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি শতভাগ উৎসব ভাতা, মেডিকেল ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারেও। আশ্বাস দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন থামানো হলো অথচ দাবি মেনে নিতে কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের, এতে ক্ষুব্ধ সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়েই আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। তিনি এখন শিক্ষামন্ত্রী, মন্ত্রী চাইলে আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব।’ এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে আশা দেখছেন দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বড় একটি অংশ বেসরকারি। যারা আন্দোলন করেছিলেন তারা ইতোমধ্যে সরকারের কাছ থেকে কিছুটা সহযোগিতা (বেতনভাতা) পাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতনভাতা পাচ্ছেন না, এ রকম বড় একটি অংশ রয়ে গেছে। যারা কোনো সহযোগিতাই পাচ্ছেন না তাদের দিকেও নজর দিতে হবে।’ মন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি একটি ওয়ার্কশপও করেছে। শিক্ষকদের বিভিন্ন পক্ষ থাকায় এ কমিটিতে একটি পক্ষ (আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠন বিটিএ) বাদ পড়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণের ব্যাপারে কোনো কমিটি হয়নি। আমরা প্রাক্কলন করে রাখছি, চেষ্টা করছি আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থাকলে জাতীয়করণের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সমান বৈষম্য। তারা এ বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর