শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাবি জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১৪

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৪ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন একজন।

বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুই পক্ষে থেমে থেমে চলে এ হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা। হল প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে জগন্নাথ হলের উদ্যোগে হলটির খেলার মাঠে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়। কনসার্ট চলাকালে ধাক্কাধাক্কি কেন্দ্র করে প্রথমে দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর একটি গ্রুপ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং অন্য গ্রুপ মাঠে অবস্থান করে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কনসার্ট ত্যাগ করলে শুরু হয় সংঘর্ষ।

ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেন এক শিক্ষার্থী। সেখানে দেখা যায় একদল ছাত্র হাতে রড ও স্টাম্প নিয়ে ছুটছে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন পলাশ রায় সৌরভ, অপূর্ব চক্রবর্তী, পল্লব মণ্ডল, অর্পণ কুমার বাপ্পি, বিপ্লব পাল, বর্ষণ রয়, কার্তিক কুমার। এরা সবাই ক্যাম্পাসে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী। এর মধ্যে অপূর্ব চক্রবর্তী পপুলার হসপিটালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইনানের অনুসারীদের মধ্যে অভিষেক ভাদুড়ি, জয় দাস, ধ্রুব, চিন্ময়, ঋদ্ধি, অভি ও প্রীতম আহত হয়েছেন।

তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ঋভু মণ্ডল বলেন, ‘যখন চার নেতা কনসার্টে এসেছিল, মমতাজের গান শেষ হলো। তখন তিন নেতা বের হচ্ছিল, তখন গণেশ ঘোষ তার কর্মীসহ এমন অবস্থা তৈরি করেছে যাতে সৈকত ভাই (ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক) বের হতে না পারে। ফলে কর্মীদের মধ্যে একটা ছোট ঝামেলা তৈরি হলে সৈকত ভাই তাদের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সৈকত ভাই বের হয়ে গেলে জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল তৈরি হয়। পরে আমরা আমাদের কর্মীদের নিয়ে ভিতরে চলে আসি। পরে ইনান ভাইয়ের তিনটি ও সাদ্দাম ভাইয়ের দুটি- মোট পাঁচটি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা একত্র হয়ে নতুন ভবনের সেক্রেটারি ব্লকের তিন তলা ভাঙচুর করে চার তলায় যেতে চায়। হামলায় হলের সভাপতি কাজল দাস, সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ ও হল ছাত্রলীগ নেতা রাজীব বিশ্বাস, গণেশ ঘোষ, সবুজ মণ্ডলের গ্রুপ উপস্থিত ছিল। প্রত্যেকের হাতে স্টাম্প, রড, কাঠের টুকরো, এসএস পাইপ ছিল। হামলায় আমাদের আট নেতা-কর্মী আহত হয়।’

হামলায় গুরুতর আহত অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি আমার কর্মীদের ভিতরে যেতে বলে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ রাজীব বিশ্বাস ও গণেশ এসে আমার মাথায় ও চোখে রড দিয়ে বাড়ি দেয়; ফলে আমার চোখের কোণে কেটে যায় এবং মাথা ফেটে যায়। আমি তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে চলে আসি। তার পরে আমি আর জানি না।’

তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী পলাশ রায় বলেন, ‘আমরা সৈকত ভাইয়ের গ্রুপটা খণ্ড খণ্ডভাবে ছিলাম।

আমি যখন আমার ১০-১২ জন জুনিয়রের সঙ্গে আসছিলাম তখন তারা লাঠিসোঁটাসহ আমাকে মারতে আসে। এ হামলায় হলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ রাজীব বিশ্বাস, গণেশ ঘোষ, সবুজ মণ্ডলের গ্রুপ উপস্থিত ছিল। এদের হাতে স্টাম্প, রড, কাঠের টুকরো, এসএস পাইপ ছিল। পাশাপাশি সাদ্দাম ভাইয়ের দুজন ক্যান্ডিডেট অরিত্র নন্দী ও সৌরভ চক্রবর্তীর হাতেও রড ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর তৎকালীন হল ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের গ্রুপ দুই ভাগ হয়ে যায়। তখন একই গ্রুপে ছিলেন লিয়ন বালা, ঋভু মণ্ডল ও জয়ন্ত, রাজীব, গণেশ ও সবুজ। এরা ইনানের অনুসারী ছিলেন। পরে লিয়ন বালা, ঋভু মণ্ডল ও জয়ন্ত ইনানের গ্রুপ ছেড়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের গ্রুপে যোগ দেন। এ নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরও দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনার জেরেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’

অভিযুক্ত ইনানের অনুসারী গণেশ এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছিল সেখানে আমি একা না, সকলেই ছিল। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ যখন বক্তব্য দিতে স্টেজের দিকে যাচ্ছিল আমরা ইনান ভাইয়ের সকল অনুসারী মিলে স্লোগান দিচ্ছিলাম। এরই মাঝে যখন সৈকত ভাই এগিয়ে আসছিলেন তখন ভিড়ের মধ্যে সৈকত ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনাকাক্সিক্ষতভাবে ধাক্কা লেগে যায়। এরপর আমি সবার সামনে সৈকত ভাইয়ের পায়ে হাত দিয়েও মাফ চাই। এরপর সৈকত ভাই মাফ করে দিলে তার অনুমতি নিয়ে তাকে এগিয়ে দিয়ে যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন সৈকত ভাইয়ের অনুসারীরা পেছন থেকে আমার ওপর হামলা করে। এরপর আমার জুনিয়ররা সেখান থেকে আমাকে রুমে নিয়ে আসে। এরপর কী হয়েছে তা ঠিক জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আবার যখন ইনান ভাইয়ের অনুসারীদের একাংশ মধুর ক্যান্টিনে যায় তখন আবার তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। কোন জুনিয়র কোন নেতার দল করবে সেটা তার ব্যাপার। এ বিষয় নিয়ে আমরা কারও ওপর চড়াও হব এটা অযৌক্তিক। আমরা সামনে হলের নেতৃত্বে আসব তাই একটা মহল চাচ্ছে আমাদের নামে কুৎসা রটাতে।’

তানভীর হাসান সৈকত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওরা যখন আমাকে সালাম দিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমাদের কর্মীদের আমি হলে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর আমার কাছে অভিযোগ আসে ওদের নাকি ওখানে মারা হয়েছে। হামলায় যারা জড়িত ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সাংগঠনিকভাবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরস্বতী পূজার এত বিশাল এক আয়োজনে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছিল। আমরা সেদিন রাতের বেলায়ই তা হ্যান্ডল করেছি। সুন্দরভাবেই সবকিছু ঠিক হয়েছিল। আজকের ঘটনার পর যাতে এ ঘটনা আর কোনোভাবেই বৃদ্ধি না পায় আমরা প্রশাসনিকভাবে সে রকমভাবেই সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। কেউ যদি শান্তিশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটায় তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে চাই।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম মাকসুদ রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর