সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধান করতে চায় শেভরন

জিন্নাতুন নূর, হবিগঞ্জ থেকে

সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জড়িত বহুজাতিক এই কোম্পানি স্থলভাগের জ্বালানি অনুসন্ধানের পাশাপাশি এবার সাগরেও জ্বালানি অনুসন্ধানে প্রথম কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ডেটা কিনছে।

জানা যায়, চলতি বছর সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে যে বিডিং হতে যাচ্ছে সেখানে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে সরকারের কাছে এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের ব্যাপারে টেন্ডারে অংশগ্রহণের কথা ভাবলেও এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে শেভরন টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে, যা আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

গতকাল বিকালে হবিগঞ্জে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এসব কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শেভরন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে কাজ করছে। দেশের গ্যাস চাহিদার অর্ধেকের বেশি শেভরন সরবরাহ করছে। এক সময় শেভরন দিনে ১৪০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করেছে। বর্তমানে উৎপাদন কমে ১১০ কোটি ঘনফুটে নেমেছে। বুস্টারসহ নানা পদ্ধতি ব্যবহার করছে। সামনে উৎপাদন আবার কমবে। শেভরন নতুন এলাকায় অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা আশা করছে এখানে বড় মজুদ পাওয়া যেতে পারে।

এজন্য একাধিক কূপ খনন করছে শেভরন। ২০৩১-এর দিকে এর ফল পাওয়া যেতে পারে। শেভরন ২৮ বছর ধরে বাংলাদেশে কাজ করছে। তারা সমুদ্রেও কাজে আগ্রহী। দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী। শেভরন যে পরিমাণে গ্যাস তুলতে পারছে বেশি মজুদ নিয়েও দেশি কোম্পানিগুলো কেন সে পরিমাণ গ্যাস তুলতে পারছে না- এমন এক প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, সিলেট গ্যাসফিল্ডসহ দেশি কোম্পানিগুলোকে শেভরনের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বলেছি। শেভরনকে ৬০ কিলোমিটার নতুন যে এলাকা দেওয়া হয়েছে সেখানে ১.৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস থাকতে পারে। এখানে গ্যাসের দাম আগের চুক্তি অনুসারেই হবে কি না- জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, একটা কমিটি গঠন করে দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে। শেভরনকে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। শেভরন ও  পেট্রোবাংলার আইনজীবীরা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। আগের স্বাক্ষরিত (১৯৯৩) পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) অনুসারেই এ বাস্তবায়ন হবে নাকি নতুন পিএসসি করা হবে তা বিশ্লেষণ চলছে।

জানা যায়, বিবিয়ানায় শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রের মজুদ কমে যাচ্ছে। শেভরন কর্তৃপক্ষ এখানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বুস্টার কম্প্রেসার ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে গ্যাসের প্রেসার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

 

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শেভরন কর্তৃপক্ষ এই গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ গ্যাসক্ষেত্রের মালিক পেট্রোবাংলা। শেভরন এখানে আমাদের পার্টনার হয়ে পিএসসি চুক্তির আওতায় কাজ করছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে কাজ করেছে এজন্য তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে  অর্থাৎ গ্যাস অনুসন্ধান কাজে থাকতে আগ্রহী। শেভরন ওয়ার্ল্ড ক্লাস কমপ্লায়েন্স নিয়ে নিরাপত্তার সঙ্গে গ্যাসক্ষেত্রগুলো পরিচালনা করছে।

পাইপলাইনে আরও ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করেছে রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড : সিলেটের হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ২ ও ৯ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এতে দৈনিক ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হবে। এখন গ্যাস ফিল্ডটির উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াল ৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল দুপুরে রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ২ ও ৯ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগে একই দিন সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে (ওসমানী নগরের দয়ামীর) মেসার্স হাজী মাসহুদ আলী মডেল পেট্রোল পাম্প উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিএফসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, কূপ-২ থেকে দীর্ঘদিন গ্যাস উত্তোলন বন্ধ ছিল। ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে উৎপাদন উপযোগী করা হয়েছে। ওই কূপ থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে এই পরিমাণে গ্যাস পাওয়ার নজির খুবই কম। অন্যদিকে ৯ নম্বর কূপটি নতুন সেখানে পাইপলাইন না থাকায় গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছিল না। রশিদপুর-৯ কূপে পাইপলাইন না থাকার কারণে গ্যাস উত্তোলন না করে ৫ বছর ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রশিদপুর-৭ নম্বর কূপ পর্যন্ত বিদ্যমান লাইনটি ব্যবহার অনুপযোগী বলে ১৭ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রকল্প হাতে নেয় এসজিএফসিএল। ২০২২ সালের জুলাইয়ে হাইড্রো টেস্টে বিদ্যমান পাইপটি ব্যবহার উপযোগী বলে রিপোর্ট আসে। এরপর ৬ নম্বর কূপে বিদ্যমান লাইনে হুকিং করতে (রশিদপুর-৯) ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে আবিষ্কৃত হয় রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড। এখানে প্রমাণিত মজুদ ১০৬০ বিলিয়ন ঘনফুট, সম্ভাব্য রয়েছে ১৩৭৩ বিসিএফ, আরও সম্ভাবনাময় বিবেচনা করা হয় ৬৮০ বিসিএফ। উত্তোলন যোগ্য প্রমাণিত (১পি) ও সম্ভাব্য মিলে মজুদ ধারণা করা হয় ২৪৩৩ বিসিএফ। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৬৭৫ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। অবশিষ্ট মজুদের পরিমাণ রয়েছে ১৭৫৭ বিএসএফ। রশিদপুরে মোট ১১টি কূপ খনন করা হয়েছে, এর মধ্যে ৯টিতে গ্যাস পাওয়া গেছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর তিন দিনের সরকারি সফরে সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন। এ সময় তিনি  কয়েকটি গ্যাস ফিল্ডের কূপ খনন ও প্রসেস প্লান্ট পরিদর্শন, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ উদ্বোধনসহ একগুচ্ছ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর