সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উপসচিব পরিচয়ে ৪ কোটি টাকা লোপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষা অধিদফতরের প্রোগ্রাম অফিসার ও উপসচিব পরিচয়ে অনিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার আশ্বাসে ৪ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।

এই চক্রের সদস্য সন্দেহে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা হলেন জুবায়ের ওরফে মো. আসাদুজ্জামান মানিক ওরফে লুৎফর রহমান এবং মো. আবদুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে সাইফুল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও ঢাকার উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গ্রেফতার দুই প্রতারক মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অফিসার পরিচয় দিয়ে ছদ্মনামে প্রতারণা করে বেড়াত। এদের একজনের নাম আসাদুজ্জামান। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা মাধ্যমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। আরেকজন আবদুল গফফার। তিনি রংপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে প্রভাষক পদ থেকে অবসরে গেছেন। ২০১৯ সালে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপরই তারা প্রতারণার ছক আঁকেন। আবদুল গফফার স্যুট-টাই পরে ভুয়া উপসচিব সেজে ঘুরে বেড়াতেন। আর আসাদুজ্জামান প্রোগ্রাম অফিসার সাজেন। তারা বিভিন্ন মাদরাসা ও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখতেন কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি পেন্ডিং আছে। এ ছাড়া লাইব্রেরিয়ান বা বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া দরকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোন দিতেন। তারা অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করার পর ভোলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সফল হন।

ভুক্তভোগী ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাকে নিয়ে সচিবালয়ে প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাদের ১২ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান। এই টাকা পেলে কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা বিভিন্নভাবে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বাকি টাকা দেয়। এভাবে আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেন গ্রেফতার ব্যক্তিরা। টাকা দেওয়ার পরও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন প্রতারক চক্রের খোঁজখবর নেন ভুক্তভোগীরা। তারা জানতে পারেন এই নামে কেউ নেই। শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা পিবিআইয়ের কাছে যান। পরে মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআই কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরও বলেন, গ্রেফতার দুজন ২০১৯ সাল থেকে প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন। আমরা তাদের এখন পর্যন্ত বিকাশ বা নগদের লেনদেনের যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা লেনদেন করেছে। প্রতারিত অনেক ভিকটিম আমাদের কাছে আসছে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করব। বর্তমানে প্রতারকদের আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তারা পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদরাসা বরগুনা থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আরও অন্যান্য মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর