মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধু-ধু বালুচর

তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা শুকিয়ে গেছে। সেচের বাইরে থাকছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমি

নজরুল মৃধা, রংপুর

ধু-ধু বালুচর

প্রকৃতিতে এখন শুষ্ক মৌসুম। তিস্তার বর্তমান চিত্র মরুভূমির মতো। চারদিকে ধু-ধু বালুচর। ডালিয়া থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার এখন হেঁটে পার হওয়া যায়। তিস্তার আশপাশের এলাকায় পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। অকেজো হয়ে পড়ার উপক্রম দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প। এবারও ৩৯ হাজার হেক্টর জমি সেচের বাইরে থাকছে। চলতি বোরো মৌসুমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের অনেক জমিতে সেচ দিতে হবে। এতে ব্যয় বাড়বে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজও চলছে ধীরগতিতে। উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। দুই বছরে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেচ কমান্ড এলাকায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর। ফলে ৩৯ হাজার হেক্টর সেচ কমান্ডের বাইরে থাকছে। নীলফামারী জেলার ডালিয়া উপজেলার সানু মিয়া বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পে পুরো কমান্ড এলাকায় এবারও পানির অভাবে অনেক জমি সেচের বাইরে থাকছে।

জানা গেছে, ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দুই দেশের এই প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই অঞ্চলে প্রথম সম্ভাবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়কালে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিকে সেচ চাষের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পানি প্রবাহ ঠিক না থাকায় প্রতি মৌসুমে পানি নিয়ে হাহাকার ওঠে। ডালিয়া পয়েন্টের উজানে ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করায় এই প্রকল্পে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। ভারতের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে যথেষ্ট পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে এ প্রকল্পের এখনো বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার একটি উপনদী। উত্তর সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে এ নদীর উৎপত্তি। লাচেন ও লাংচু নামের দুই পর্বত স্রোতধারাই তিস্তার মূল উৎস। বাংলাদেশে প্রায় ১১২ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে তিস্তা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যমুনার সঙ্গে গিয়ে মিশেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর