বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
পৌরসভা

আলমারিবন্দি মহাপরিকল্পনা

♦ গেজেট হয়েছে মাত্র ৫টি ♦ ২৫০টি মাস্টারপ্ল্যান আলোর মুখ দেখেনি ♦ পরিকল্পনা না থাকায় যত্রতত্র উন্নয়ন হচ্ছে

হাসান ইমন

দেশের পৌরসভাগুলোয় পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ২০০৮ সালে পৌরসভা মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। প্রতিটি মহাপরিকল্পনার মেয়াদ হবে ২০ বছর। সেই লক্ষ্যে এলজিইডি ২০০৯ সালে জেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে ২২টি পৌরসভার মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করে। একই সঙ্গে আরও ৪টি প্রকল্প দিয়ে মোট ২৫৫টি পৌরসভার পরিকল্পনার কাজ শেষ করে সংস্থাটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে মাত্র ৫টি পৌরসভার পরিকল্পনা গেজেট করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বাকিগুলো আলমারিতে বন্দি রয়েছে।

জানা যায়, রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ (সর্বশেষ সংশোধিত) এর এলোকেশন অব বিজনেস এবং দ্য ডিফারেন্স মিনিস্ট্রি অ্যান্ড ডিভিশনস অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্ব ও কার্যাবলি অংশে উপজেলা, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, অনুমোদন ও গেজেট নোটিফিকেশনের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯-এ বলা আছে, পৌরসভা গঠনের বা এই আইন বলবৎ হওয়ার অনূর্ধ্ব ৫ বছরের মধ্যে পৌর এলাকার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২০০৮ সালে পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। দেশে মোট পৌরসভা ৩৩১টি। এর মধ্যে (২০০৯-১৪) ৫ বছর মেয়াদি এলজিইডি জেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২২টি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এসব মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে মোট খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর উপজেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২১৫টি উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে সরকারের খরচ হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এলজিইডির দ্বিতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১টি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে এসব মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কাজ হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে ভোলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কাজ করা হয়েছে। এখানে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। আর তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৬টি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল মেয়াদি এই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। সর্বমোট এলজিইডি ২৫৫টি বিভিন্ন পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে ৫টি পৌরসভার (টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মাধবপুর) মাস্টারপ্ল্যান গেজেট জারি হয়েছে। বাকি ২৫০টি পৌরসভার মধ্যে ২৯টি স্থানীয় সরকার বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আর ২২১টি এলজিইডির আলমারিতে বন্দি রয়েছে। এগুলো অনুমোদনের জন্য সংস্থাটি থেকে একাধিকবার চিঠি দিলেও মন্ত্রণালয় কোনো সায় দিচ্ছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পৌরসভাগুলো এখনো নিজেদের মতো করে কাজ করে চলেছে। আবাসিক এলাকায় দেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি। কৃষিজমিতে উঠছে বাড়িঘর। বর্জ্য রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। উন্নয়নের পরিকল্পনা বলতে কিছু নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরিকল্পনা করা হলেও সেটা কাজে দিচ্ছে না। এসব পর্যায়ে সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ তৈরি না হওয়াই মূল কারণ। একই সঙ্গে জাতীয় পরিকল্পনা কাঠামো, আঞ্চলিক পরিকল্পনা এবং স্থানীয় পরিকল্পনা দরকার।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে নগরায়ণ হচ্ছে। জেলা, উপজেলা ও পৌরসভায় উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়ন অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। যে জায়গাগুলো মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান ছিল সেগুলোতে বিভিন্ন অবকাঠামো হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে যত্রতত্র আবাসিক, বাণিজ্যিক শিল্পকারখানাসহ নানা অবকাঠামো তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকার মাস্টারপ্ল্যান। এলজিইডি মাস্টারপ্ল্যান করলেও মন্ত্রণালয় গেজেট করেনি। মাস্টারপ্ল্যান করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলে রাখার মানে কী! স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এসব মহাপরিকল্পনাগুলো দ্রুত গেজেট করে পৌরসভা এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়নে তদারকি করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। যেহেতু ২০১৪-১৫ সালের দিকে করা হয়েছে সে জন্য একটু রিভিউ দরকার। কারণ ওই সময় একরকম ছিল এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। এসব মাস্টারপ্ল্যান যাচাই-বাছাই করে গেজেট করা হবে। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ করে গেজেটের আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর