বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উপজেলা ভোটে জামানত বাড়ল ১০ গুণ

থাকছে না স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটারের স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ১০-১৫ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এ ছাড়া রঙিন পোস্টার ব্যবহার, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর তুলে দেওয়ার প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে ইসি। অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগপর্যন্ত সময়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন।

আগামী ৪ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটের আগে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় পেলে তা কার্যকর হতে পারে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে ইসি সিদ্ধান্ত নিলেও এখনই এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। ইসির এসব সিদ্ধান্ত ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তা আবার ইসির কাছে ফেরত পাঠাবে। তারপর ইসি পর্যালোচনা করে তা আবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আগের জামানত বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা করার। তিনি জানান, আরও যেসব প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগপর্যন্ত সময়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন লোক সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন। আগে বিধিমালায় এ বিধান ছিল না। এখন জামানত রক্ষায় প্রার্থীদের প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ ভোট পেতে হয়। এটি ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। এ ছাড়া সাদাকালো পোস্টারের পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ছাপানো যাবে, এমন প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে। ইসি সচিব জানান, গত বছর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও ক্ষমতা বাড়ানো হয়। উপজেলা নির্বাচন বিধিমালায় এটি সমন্বয় করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪৮০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে ইসি। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা এবার স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।

এর মধ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিল ইসি। এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। ইসির এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হবে না। তবে আগামী নির্বাচনের আগে ইসির এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালায় যেসব সংশোধনের প্রস্তাব : স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা দাখিলের বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে জামানত ১ লাখ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা এবং মহিলা সদস্যের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, দুটি (সাধারণ ও সংরক্ষিত) ভাইস চেয়ারম্যান পদ রয়েছে। পাশাপাশি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য একটি পদও রয়েছে, যারা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। সমভোটের ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষা কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনি ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং মহিলা সদস্যদের ১ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ আচরণ বিধিমালায় যেসব সংশোধন প্রস্তাব : পোস্টার, ব্যানার সাদা-কালো অথবা রঙিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাঁচজনের অধিক কর্মী বা সমর্থককে নিয়ে জনসংযোগ করা যাবে না। প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং পৌরসভার প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনি ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না। নির্বাচনি ক্যাম্প বা অফিসের আয়তন ৬০০ বর্গফুটের বেশি হতে পারবে না। নির্বাচনি প্রচারণায় একটির বেশি শব্দযন্ত্র (হর্ন) বা জনসভায় চারটির বেশি শব্দযন্ত্র (হর্ন) ব্যবহার করা যাবে না। শব্দ বর্ধনকারী যন্ত্রের শব্দের মান মাত্রা ৬০ ডেসিবলের অতিরিক্ত হতে পারবে না। প্রচারণায় পোস্টার বা ব্যানারে পলিথিনের ব্যবহার না করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর