বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পোস্টারে প্রতিবাদ কবি গ্রেফতারে তোলপাড়

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

পোস্টারে প্রতিবাদ কবি গ্রেফতারে তোলপাড়

পোস্টারের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো কবি, সংস্কৃতিকর্মী ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার শামীম আশরাফ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে শামীম আশরাফকে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছেন আদালতের পরিদর্শক মো. সফিকুল ইসলাম। পরে বিকালে কারাগারে জামিন মঞ্জুরের পত্র পৌঁছলে মুক্তি পান শামীম আশরাফ।

এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা গ্রাফিটিতে গিয়ে শামীম আশরাফকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও সাবেক মেয়র ইকরামুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক পোস্টার তৈরি না করার অনুরোধ জানান। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভও করেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রাফিটিতে যান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মেয়রের বড় ভাই মো. আমিনুল হক শামীম। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ শামীম আশরাফকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর সমর্থক ও বর্তমান এমপি মোহিত উর রহমান শান্তর সমর্থকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। গভীর রাত পর্যন্ত থানা এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দুই গ্রুপের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। পরদিন সোমবার শামীম আশরাফকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে জামিন শুনানি না করে আদালত শামীমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে নতুন মামলা : সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংস্কৃতিকর্মী ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে শামীম আশরাফকে অভিযুক্ত করে মামলাটি করা হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার নন্দী বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মালেক।

সিটি করপোরেশনের করা মামলায় বলা হয়েছে- গত ৭ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন দেয়ালে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে বেআইনিভাবে সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে আসামির (শামীমের) ডিজাইন করা ও মুদ্রিত পোস্টার সাঁটানো হয়। পোস্টারের বক্তব্যসমূহ ছিল ‘শোষক নয় সেবক চায় নগরবাসী’, ‘হোল্ডিং ট্যাক্সের পাহাড়সম বোঝা কেন সাধারণ মানুষের উপর চাপাও’, ‘দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে ঠিকাদার ১ জন, মালিক ১ জন, শাসকও ১ জন’, ‘এক পুছেই ৪২০০ অটোরিকশা গরিব চালক মানুষটার কথা কেউ ভাবে না’, আপনি জানেন কি? ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ প্রকল্পে ১৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে বাকি টাকা ফেরত গেল কেন? এ ধরনের তথ্যসন্ত্রাস ও তথ্য বিকৃত করে কুতথ্য সমাজে প্রচার করে মানুষের মনে সিটি করপোরেশনের নাম ক্ষুণ্ন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, যা তথ্যসন্ত্রাসের কাজ।

আসামি সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার, আসামির কম্পিউটার ডিভাইসে ডিজাইন করা নেতিবাচক পোস্টার সাঁটানো, নাগরিকদের বিভ্রান্ত তথ্য সরবরাহ ও ইলেকট্র্রনিক ডিভাইসে প্রচার করে তথ্যসন্ত্রাস সৃষ্টি করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে অপরাধ করেছেন।

ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মালেক বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। পিবিআইকে তদন্ত শেষে আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর