শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কমছে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি

এক বছরে কমেছে ২১ শতাংশ, তার পরও শীর্ষে বাংলাদেশ

শাহেদ আলী ইরশাদ

কমছে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালে ২ হাজার ১৯১ কোটি ইউরোর পোশাক আমদানি করে। অথচ ২০২৩ সালে সেটি ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি ইউরোতে নেমে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ক্রমবর্ধমান সুদের হারে ভোক্তার চাহিদা কমেছে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতাদের খুচরা দোকানে পোশাকের মজুত রয়ে গেছে। এ কারণে নতুন করে পোশাক কিনছে না তারা। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি ইউরোর পোশাক আমদানি করেছে জোটভুক্ত দেশগুলো। বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৩৪ কোটি কেজি পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমিয়ে ১ হাজার ১১৪ কোটি কেজি পোশাক আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬৪ কোটি ইউরোর। অথচ ২০২২ সালে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৩৯৫ কোটি ইউরোর। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় ইউরোপে প্রায় সব পোশাক সরবরাহকারীর রপ্তানি কমেছে। ইউরোস্ট্যাটের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০২৩ সালে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩১৯ কোটি ইউরোর হয়েছে। যা ২০২২ সালে ছিল ৯ হাজার ৯২৯ কোটি ইউরোর। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীন থেকে পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে ২ হাজার ২৭৩ কোটি ইউরো হয়েছে। যা ২০২২ সালে ছিল ২ হাজার ৮৯৮ কোটি ইউরোর। তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, ২০২২ সালে পরিমাণের দিক থেকে ইউরোপের বাজারে সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে মূল্যের দিক থেকে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে রয়েছে চীনই। কারণ চীন দামি ও বৈচিত্র্যময় পোশাক রপ্তানি করে। ২০২৩ সালে ১ হাজার ১১০ কোটি কেজি কিলোগ্রাম পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। তুরস্কের পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে ৯৯৩ কোটি ইউরো হয়েছে। যা ২০২২ সালে ১ হাজার ১৪৫ কোটি ইউরো ছিল। ২০২৩ সালে ভারতের পোশাক রপ্তানি ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ৪০৪ কোটি ইউরো হয়েছে। ২০২২ সালে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৬৫ কোটি ইউরোর। ২০২৩ সালে ৩৭৮ কোটি ইউরোর পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। যা ২০২২ সালে ছিল ৪৪৩ কোটি ইউরো। একইভাবে কম্বোডিয়া থেকে গত বছর রপ্তানি কমেছে ৫০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে দেশটি ৩২০ কোটি ইউরোর পোশাক রপ্তানি করলেও ২০২২ সালে ছিল ৩৭০ কোটি ইউরোর। ২০২২ সালে কম্বোডিয়া ৩৭৯ কোটি ইউরো পোশাক রপ্তানি করলেও ২০২৩ সালে ৬৯ কোটি কমে ৩১০ কোটি ইউরোতে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সুদের হার এবং মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। যার কারণে ইউরোপের বাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে। এতে ক্রেতারা গত বছরজুড়ে কম ক্রয়াদেশ দিয়েছেন। পরিমাণের দিক থেকে রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এস এম মান্নান কচি আরও বলেন, চীন, ভিয়েতনাম উচ্চমূল্যের ও বৈচিত্র্যময় পোশাক রপ্তানি করে। বাংলাদেশ সাধারণত মৌলিক পোশাক রপ্তানি করে। যা দামের দিক থেকে আমাদের দ্বিতীয় অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া ন্যায্যমূল্যও একটি সমস্যা। কারণ বাংলাদেশ পোশাকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর