শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

হবিগঞ্জে বিএনপি, নীলফামারীতে নিজেরাই

সারা দেশে জমে উঠছে উপজেলা নির্বাচন

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ ও আবদুল বারী, নীলফামারী

হবিগঞ্জে বিএনপি, নীলফামারীতে নিজেরাই

হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে বইছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া। জেলার নয়টি উপজেলার সম্ভাব্য সব প্রার্থী ইতোমধ্যে চষে বেড়াতে শুরু করেছেন নির্বাচনি মাঠ। এর মধ্যে কয়েকজন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলেও অনেক প্রার্থী এখনো চালাচ্ছেন কৌশলী প্রচারণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব রয়েছেন অনেক প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না তা নিয়ে ধূম্রজাল থাকলেও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হবিগঞ্জে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির সাবেক ও বর্তমান সাত নেতা। এ ছাড়াও নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা তুলে ধরে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ আরও অর্ধশতাধিক প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় এবার তিন ধাপে নয়টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৪ মে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, ১১ মে চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা এবং ১৮ মে মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, সদর ও লাখাই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় জমজমাট লড়াই হবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে। প্রার্থীদের দক্ষতা বিচক্ষণতা ও সততা দেখে ভোট দেবেন সাধারণ ভোটাররা। তারা বলেন, শুধু উন্নয়নের আশ্বাস নয়, গ্রামগঞ্জের উন্নয়ন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যারা সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে পারবে এমন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চান তারা।

এবারের নির্বাচনে যারা মাঠে রয়েছেন তারা হলেন মাধবপুর উপজেলা থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা এস এম শাহজাহান। যিনি নিজের প্রার্থিতা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া মাঠে ও আলোচনায় রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, মুজিব উদ্দিন তালুকদার ওয়াসিম। চুনারুঘাট উপজেলায় আলোচনায় আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল কাদির লস্কর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, রায়হান উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুর রহমান চৌধুরী, বিএনপি নেতা সৈয়দ লিয়াকত হাছান। বাহুবল উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাই, আবদুল কাদির চৌধুরী, রাজন চৌধুরী, বিএনপি নেতা ইশতিয়াক আহমেদ রুবেল। নবীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ, বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান সেফু, আওয়ামী লীগ নেতা বুলবুল চৌধুরী, বুরহান উদ্দিন চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুর রহমান মুকুল। বানিয়াচং উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান। আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান মর্ত্তুজা হাসান, সাংবাদিক চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন, মো. আকবর হোসেন, বিএনপি নেতা খালেদুর রহমান ঝলক। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া বেলাল। হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান শামীম, বিএনপি নেতা মহিবুল ইসলাম শাহীন ও কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আশিকুর রহমান। লাখাই উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম আলম, রফিক আহমেদ, মাহফুর রহমান মাহফুজ ও যুবলীগ নেতা ইকরামুল মজিদ শাকিল।

হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এবার জেলায় মোট ভোটার রয়েছেন ১৭ লাখ ১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২২ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ৮ লাখ ৪২ হাজার ২১০ জন।

দলীয় প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে সব চেয়ারম্যান : উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে নীলফামারীর ৬টি উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। অন্য দলের কয়েক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বিএনপির কোনো প্রার্থীর নাম এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। সরকারদলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি এবার নতুন প্রার্থী বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবার দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হিসাব-নিকাশ অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। নিজ দলের নেতাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যানরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন বলয়ে সক্রিয় হচ্ছেন।

সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নীলফামারীর ৬টি উপজেলার মধ্যে চারটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন প্রার্থীরা। তারা হলেন- নীলফামারী সদর উপজেলায় শাহিদ মাহামুদ, ডোমার উপজেলায় তোফায়েল আহম্মেদ, সৈয়দপুর উপজেলায় মোখছেদুল মোমিন, ডিমলা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দুই নেতা জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম বারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমান সব চেয়ারম্যানই এবার দলীয় প্রতিপক্ষের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কৌশলে ইতোমধ্যেই তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন।

নীলফামারী সদর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ আবারও প্রার্থী হবেন। তবে তার সামনে শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন নীলফামারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমান। গণসংযোগের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই তার প্রার্থিতার বিষয়টি জানান দিয়েছেন তিনি।

ডোমার উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মালেক এবার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তবিবুল ইসলামকে এবার লড়তে হবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু ও নীলফামারী জেলা পরিষদের সদস্য উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস পারভেজের সঙ্গে। তারা মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জলঢাকা উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর এবারও প্রার্থী হবেন। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। তার সঙ্গে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আজম এলিচ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদ হোসেন রুবেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনছার আলী মাঠে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম বারী এবারও প্রার্থী হবেন। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। তবে তার সামনে কয়েকজন শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পতিরাম চন্দ্র রায় ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাইনুল আরফিন সপু প্রার্থী হতে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোখছেদুল মোমিন এবারও প্রার্থী হবেন। এবার তাকে লড়তে হবে একাধিক দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এই উপজেলায় প্রার্থী হতে নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর