শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

থামছেই না মশার উৎপাত

লোকদেখানো কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই করছে না সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

থামছেই না মশার উৎপাত

শীত শেষেও রাজধানীতে মশার উপদ্রব কমছে না। বরং বিভিন্ন এলাকায় মশার ঘনত্ব বেড়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নগরবাসী বলছে, আসলে কিছুই করছে না সিটি করপোরেশন। শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ফলে রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণ বরাবরের মতোই প্রশ্নের মুখে থেকে যাচ্ছে। দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে গত চার মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব অনেক বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টির বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমতেই এবার কিউলেক্স মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসী। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট কোথাও যেন নিস্তার নেই। বিশেষ করে সন্ধ্যা না হতেই এ মশার উপদ্রব বাড়ে। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার চিত্রই এমন। রাজধানীর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের রিকশাচালক এমরান হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে রিকশা থামিয়ে কোথাও দুই মিনিটও বসা যায় না। মশা মনে হয় তুলে নিয়ে যাবে। যেদিন এলাকায় মশা তাড়াতে সিটি করপোরেশন থেকে ধোঁয়া দেওয়া হয়, সেদিন মশার উপদ্রব যেন আরও বেশি থাকে।’

মিরপুর গোলারটেক এলাকার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার জানান, কয়েকদিন ধরে মশার উপদ্রবে তিনি অতিষ্ঠ। বিকাল হলেই ছয় মাসের সন্তানকে মশা থেকে বাঁচাতে মশারির ভিতরে রাখতে হয়। তিনি বলেন, ‘মশার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বাচ্চাকে মশারির মধ্যে রেখেও রেহাই নাই। আমাদের এদিকে সিটি করপোরেশনের মশা কর্মীদের দেখা যায় না। মশার কামড়ে পরিবারের সবার ত্বকে দাগ পড়ে গেছে।’

শুধু এ দুই এলাকায় নয়, ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় বেড়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। দেশে এডিস মশা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গুর প্রভাব কমে এলেও কিউলেক্স মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় এ মশার উপদ্রব দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এ সময়ে যে মশা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে ৯৯% হচ্ছে কিউলেক্স মশা। যেটি আসলে এডিস মশা নয়। এ মশা সাধারণত পচা পানিতে হয়। নর্দমা, ড্রেন, ডোবা, বিলঝিলের পানি এখন পচে গেছে। পচা পানিতে জন্মাচ্ছে কিউলেক্স মশা। সেই সঙ্গে শীতের শেষে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে এবং পানি বহমান না থাকায় কিউলেক্স মশার জন্মানোর হার বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে যে মশার ডিম থাকে সেগুলো একযোগে ফুটে যায়। যার কারণে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। কিউলেক্স মশার কামড়ে অনেক সময় গোদ রোগ হয়। যেটাকে ফাইলেরিয়াসিস বা এলিফ্যান্টিয়াসিসও বলা হয়। এটি হলে হাত-পা ফুলে যায়।’ অনেকেই অভিযোগ করেন, মশা মারতে বা তাড়াতে এর আগে কয়েল এবং অ্যারোসল স্প্রে ব্যবহার করা হলে কাজ করত। তবে ইদানীং কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করলেও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না। এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো একটি কীটনাশক একটানা পাঁচ বছরের বেশি ব্যবহার করা হলে মশা সেই কীটনাশকের বিপক্ষে সহনশীলতা তৈরি করে। এ প্রক্রিয়ায় ওই কীটনাশকের প্রতি সহনশীল হওয়ায় সেটি আর কাজ করে না। আর এজন্যই মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি পাঁচ বছর পর পর কীটনাশক পরিবর্তন করা দরকার।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, রাজধানীতে গত চার মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। গত অক্টোবর ও নভেম্বরে গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে মশা ধরা পড়েছিল ২০০টির কম। আর ডিসেম্বরে একই ফাঁদে মশার সংখ্যা ছিল ২৫০। জানুয়ারিতে পাতা ফাঁদে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টির বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়ে। গবেষণার তথ্য বলছে, এ ধারা চলতে থাকলে আগামী মার্চ পর্যন্ত তা বেড়ে চরমে পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। ড. কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মশা ফাঁদে পড়েছে। রাজধানীর চার এলাকার পাঁচ স্থানের মধ্যে উত্তরায় মশা সবচেয়ে বেশি। উত্তরায় প্রতিদিন ৪৫০টির বেশি মশা ফাঁদে পড়েছে। এতসংখ্যক মশা নগরীর কোথাও দেখা যায়নি। উত্তরার পর সবচেয়ে বেশি দক্ষিণখানে ৪১০ ও মিরপুরে ৩৫০টির মতো পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর