শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণই চ্যালেঞ্জ

রাশেদ হোসাইন

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৈরি হয়েছে চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করে রমজানের আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য দেশের মানুষের সবচেয়ে অস্বস্তির বিষয়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। এর পেছনে ডলারের উচ্চমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে ঘাটতি, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ায় সিন্ডিকেটের কাছে বারবার নাজেহাল হতে হয় ভোক্তাদের। জানা যায়, রমজান এলেই আগের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। রমজানে অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামাতে এবং পণ্যদ্রব্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিশেষ অভিযান, মোবাইল কোর্ট, জেল-জরিমানাও করা হয়। এত সব সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যেন থামানোই যাচ্ছে না। এর কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলেন, যখন বাজার মনিটরিংয়ের লোক আসে তখন নির্ধারিত দামেই পণ্য বেচাকেনা চলে। মনিটরিং আওয়ার শেষ হলেই আবার আমাদের দামে কেনাবেচা হয়।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, রমজানের আগে গতকাল ডালের বড় দানা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি ডালের দাম তুলনায় ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। মুগ ডালের ৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। ছোলার দাম ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। পিঁয়াজের দাম ২৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। রসুনের দাম ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। হলুদের দাম ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। চিনির দাম ২৮ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। খেজুরের দাম ১২০ শতাংশ বেড়েছে। লম্বা বেগুনের দাম ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। আলুর দাম ৩৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। মিনিকেট চালের দাম ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি তথ্যানুযায়ী, দেশে নিত্যপণ্যের মজুত পর্যাপ্ত। দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। রমজানে নিত্যপণ্যের মধ্যে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, পিঁয়াজ, ডাল ও খেজুর ন্যায্যমূল্যে বিক্রির চিন্তা করছে সরকার। সরকার উদ্যোগ নিয়ে টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, চিনি, খেজুর, তেল ও ছোলা বিতরণ করে আসছে। এর ফলে বাজারের ওপর কিছুটা চাপ কমবে। রমজানের চাহিদা মেটাতে ভোজ্য তেল, ছোলা, আদা, রসুন, খেজুরসহ সব নিত্যপণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় মজুত করা হচ্ছে। যাতে রমজানে মানুষের পণ্যের সংকট না হয়। সহনীয় দামে কিনতে পারে। সেজন্য একাধিক সংস্থা কঠোর মনিটরিং করছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার পর্যবেক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও রোজার বাজারে পণ্যমূল্য অনিয়ন্ত্রিতই থেকে যাচ্ছে। রমজান ঘনিয়ে এলেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা সুফল আনে না। চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু সিন্ডিকেট। বৃষ্টি হলেও দাম বাড়ে, না হলেও দাম বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম কিংবা বেশি যা-ই হোক না কেন, অসাধু সিন্ডিকেট দাম বাড়ায় ইচ্ছামতো। রমজানে দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। রমজান মাসে তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই প্রেক্ষিতে এসব পণ্যের মজুত ও সরবরাহ ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে বাজারে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, পণ্য সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখাই আমাদের লক্ষ্য। কেননা পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে এর যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বর্তমান সরকার গঠনের পর গত ১২ জানুয়ারি অনির্ধারিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের কষ্ট লাঘব করতে দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। ধর্মীয় অনুভূতি বিবেচনায় রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পণ্য খেজুর। তিনি খেজুরের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমজান মাস কেন্দ্রিক আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। সরকার উদ্যোগ নিয়ে টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, চিনি, খেজুর, তেল ও ছোলা বিতরণ করে আসছে। এর ফলে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে আসবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।

দেশে ডলারের সংকট কেটে গেলেও দাম বেশি : সালমান এফ রহমান

 

সর্বশেষ খবর