রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শ্রমিক নিহতের জেরে অবরোধ ভাঙচুর

ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল মুনিরার, চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ

গাজীপুর প্রতিনিধি

শ্রমিক নিহতের জেরে অবরোধ ভাঙচুর

গাজীপুরে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচাপায় গাছা থানার কুনিয়া বড়বাড়ী এলাকায় এক নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত মুনিরা (৩০) শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ থানার ভুইয়াকান্দি গ্রামের রুহুল আমিনের স্ত্রী। তিনি সিটি করপোরেশনের বড়বাড়ী তারগাছ এলাকায় হাশেমের বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় টেড বার্নহার্ডজ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের অপারেটর হিসেবে চাকরি করছিলেন। এ ঘটনার জেরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া    মেনে নেওয়া ও নিহতের বিচারের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সকাল ৮টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা থানার কুনিয়া বড়বাড়ী এলাকার মেরিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে অন্যদের মতো নারী পোশাক শ্রমিক মুনিরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্রুতগতির একটি ময়লার গাড়ি ওই নারী শ্রমিককে চাপা দিলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তখন চাপা দেওয়া গাড়িটিকে এক ভ্যানচালক থামানোর চেষ্টা করলে একটি অটোরিকশা তাকে চাপা দিলে আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ও স্থানীয় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে উত্তেজিতরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আন্দোলনরতরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে জিএমপি পুলিশ, শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এ সময় নিহত শ্রমিক যে গার্মেন্টে চাকরি করতেন সেই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা অন্য সহকর্মীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তখন যেসব কারখানার শ্রমিকরা বের হতে চাননি সেসব কারখানার গেটে ইটপাটকেল ছোড়েন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও শ্রমিক বিক্ষোভে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরাও রাস্তায় নেমে এলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের দাবি, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এই পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে দুপুর ১২টার দিকে তারা রাস্তা ছেড়ে চলে যান। এরপর ওই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালে টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক কর্মজীবী মানুষকে হেঁটে কিংবা বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা গেছে। এদিকে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সড়কে গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন কারাখানায়ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে মহাসড়কের পাশের জয়বাংলা সড়কের পদ্মা শাতিল আরব ফ্যাশনস লিমিটেড এবং পদ্মা অ্যাপারেলস কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। এমন অভিযোগ করেন দুটি কারখানার পরিচালক জাবেদ হোসাইন ভূইয়া। পদ্মা শাতিল আরব ফ্যাশনস লিমিটেড এবং পদ্মা অ্যাপারেলস কারখানার পরিচালক জাবেদ হোসাইন ভূইয়া বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের গাড়িচাপায় শ্রমিক মৃত্যুর পরই কিছু লোকজন আমাদের কারখানার প্রধান ফটক ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ফটক ভেঙে তারা আমাদের শ্রমিকদের বিক্ষোভে একত্রিত করার চেষ্টা করছিল। আমাদের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে তারা কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গ্লাস ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে ভিতরে প্রবেশ করে পার্কিংয়ে থাকা পিকআপ ৩টি এবং প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে।’ কারখানার বিভিন্ন আসবাবপত্রও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন তিনি। কারখানায় হামলার ঘটনায় কারা জড়িত থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকদের এ দুর্ঘটনাজনিত আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বহিরাগতদের ইন্ধন থাকতে পারে। কারখানায় সিসিটিভির ফুটেজে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। এরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এলাকাবাসী ও শ্রমিকদের দাবি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের মাঝে থাকা ডিভাইডার উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে পুরো সড়কের সব স্থান দিয়েই সড়ক পারাপার হওয়া যায়। এতে সড়ক পার হতে গিয়ে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইব্রাহিম খান বলেন, ‘পুলিশ তাদের সরাতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে জলকামান, এপিসি গাড়ি ব্যবহার করে এবং ৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষুব্ধদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হলে তারা আন্দোলন ত্যাগ করে চলে যায়।’ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু মুহাম্মদ সাজেদুল কবীর জোয়ারদার জানান, উত্তেজিত শ্রমিকরা মহাসড়কে অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করার কারণে পরিবেশ অনুকূল না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে আগুন নেভাতে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানার ওসি মো. শাহআলম জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও যানবাহন বিকল্প পথে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া এবং তাদের সহকর্মী নিহতের ঘটনার বিচারের আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তিনি জানান, এ সময় শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের দাবি জানান। তাদের উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে ছিল- মাঝখানে বিআরটি প্রকল্পের লেন বন্ধ করার। বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের দাবি জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আহত একজনকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর