রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছি : রওশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, দলের অগণিত নেতা-কর্মীর একান্ত দাবির মুখে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছি। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি মিলনায়তনে জাপার একাংশের ডাকা বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। রওশন এরশাদ বলেন, সভার মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা দায়িত্ব গ্রহণকে অনুমোদন দিয়েছেন। এর আগে ২৮ জানুয়ারি রওশন এরশাদ জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাঁদের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এরপর ৯ মার্চ পার্টির কাউন্সিল ডাকেন। সে কাউন্সিল সামনে রেখে সিরিজ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গতকালের বর্ধিত সভা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় প্রমুখ।

জাতীয় পার্টিতে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক চর্চা হবে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, আপনারাই পার্টির সব ক্ষমতার উৎস। আপনারা যেভাবে চাইবেন পার্টি সেভাবেই পরিচালিত হবে। ৯ মার্চ জাপার দশম জাতীয় সম্মেলনের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো বিভ্রান্তিতে কান দেবেন না। এরশাদপত্নী রওশন বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নীতি-আদর্শ, তাঁর চেতনা-প্রেরণা হচ্ছে জাপার অস্তিত্ব। সে অস্তিত্ব যারা মুছে দিতে চায় তারা জাপার নেতা পরিচয় দেওয়ার অধিকার রাখে না। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের মলাট থেকে এরশাদের ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর এবার নির্বাচনে পার্টির প্রার্থীদের পোস্টারে ছবি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর নির্বাচনি পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি রেখেছেন। অথচ জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যানের পোস্টারে এরশাদের ছবি জায়গা পায়নি! এটা পার্টির অগণিত নেতা-কর্মীর মনে আঘাত দিয়েছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। রওশন এরশাদ বলেন, আপনাদের ভোটে জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এসব জনপ্রিয়, যোগ্য নেতা এবং অভিভাবকহীন অসংখ্য নেতা-কর্মী ও প্রার্থীকে বিপদে রেখে আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমার ছেলের আসন যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমি কি নির্বাচনে যেতে পারি? নিশ্চয় না। তার পরও আমি সবকিছু মেনে নিতে পারতাম, যদি নির্বাচনে পার্টির ভরাডুবি না হতো। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, ৯ মার্চের সম্মেলন সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনের জন্য রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া গেছে। আপনারা সকাল ১০টার মধ্যে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের নিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হবেন। ওই দিন আপনারাই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচ করবেন। রওশন এরশাদ বলেন, সাংবিধানিকভাবে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অশনিসংকেত শোনা যাচ্ছে। সরকার যদি তা মোকাবিলা করতে না পারে তাহলে দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। দ্রব্য এখনই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আর রমজান সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওত পেতে বসে আছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রধান কাজ হবে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে। চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। বেকার সমস্যা সমাধানে প্রাধান্য দিতে হবে। যুবকরা কাজের সন্ধানে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাচ্ছে, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর