বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাকায় ভাঙাগড়ার খেলা

রাস্তা সংস্কারের পরই চলে খোঁড়াখুঁড়ি, আবার সংস্কার

হাসান ইমন

ঢাকায় ভাঙাগড়ার খেলা

সড়কের খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর দারুসসালামের গোলারটেক এলাকার বাসিন্দারা -জয়ীতা রায়

রাজধানীর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় চলছে ভাঙা গড়ার খেলা। কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করতে সিটি করপোরেশন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। কোথাও আবার স্যুয়ারেজ লাইন ঠিক করতে ঢাকা ওয়াসা রাস্তা কাটছে। আবার কোথাও বিদ্যুতের লাইন ও ইন্টারনেট ক্যাবল মাটির নিচে নিতে রাস্তা কাটছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কোথাও আবার সড়কে তিন মাস আগে কাজ শেষ করে সংস্কার হয়ে নতুনভাবে আবার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। আবার কোথাও দুই থেকে তিন মাস রাস্তা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। এভাবে চলছে বিভিন্ন সংস্থার ভাঙা গড়ার খেলা।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার গোপিপাড়া সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এক মাস হতে চললেও ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ সড়কটি বনানী লেক সড়ক ও রামপুরা-বাড্ডা সড়কের সঙ্গে সংযোজিত। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক কেটে রাখার ফলে পরিবহন চলাচলে যেমন ভোগান্তি হচ্ছে তেমনি মানুষ চলাচলেও। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কাছাকাছি এলাকায় এত সড়কে একসঙ্গে কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া মধুবাগ এলাকার ওলন রোডসহ কয়েকটি সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। ড্রেনেজ, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি সংস্থার রাস্তা কেটে সংস্কার চলছে। দীর্ঘদিন কাজ চলতে থাকায় এ এলাকার মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কোনো গাড়ি বা রিকশা চলাচল করতে পারছে না। একই সঙ্গে হেঁটে চলাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা সড়কটির বা পাশে খুঁড়ে বিদ্যুতের লাইন ভূগর্ভস্থ করা হচ্ছে। সড়কটির এক পাশে খননের ফলে মূল সড়কটি ছোট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে রাস্তার ওপরে বিদ্যুতের লাইনের উপকরণ রাখা হয়েছে। এতে সড়কটিতে সার্বক্ষণিক থাকছে যানজট। আর বেড়েছে ভোগান্তি। যদিও এ সড়কটি তিন মাসে আগেও কেটে ড্রেনেজ লাইন সংস্কার করেছে সিটি করপোরেশন। মতিঝিল এলাকায় কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়াসিন উদ্দিন শাকিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ সড়কটি কিছুদিন আগেও সিটি করপোরেশন কেটেছে। সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতে নতুন করে আবার বিদ্যুৎ বিভাগ কেটেছে। ঢাকা শহরে সেবাদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। অল্প একটু রাস্তা পার হতে আধা ঘণ্টা সময় লেগে যায়। মাঝেমধ্যে আরও বেশিও।

মিরপুর দারুস সালামের গোলারটেক এলাকায় ড্রেনেজ সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে সড়কটি। এ সড়কটির মাঝখানে খনন করা হলেও দুই পাশে পুরনো ভাঙা পাইপগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে সড়কটি দিয়ে কোনো পরিবহন যাতায়াত করতে পারছে না। আর এ এলাকার বাসিন্দারাও হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করছে। একই চিত্র দেখা যায় লালমাটিয়ায়। সেখানে নতুন করে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন বসানোর কাজ চলছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডেও চলছে দীর্ঘদিন থেকে খোঁড়াখুঁড়ি। আসাদ এভিনিউ ও তাজমহল রোডকে যুক্ত করা সড়কটি প্রায় ৫৫০ মিটার দীর্ঘ। সড়কটিতে পয়ঃনালা নির্মাণের কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। একই সঙ্গে কাটাসুর এলাকার শের-ই বাংলা রোড, সাদেক খান রোড (নামাবাজার অংশ), জাফরাবাদের শারীরিক শিক্ষা কলেজ সড়ক, জাকির হোসেন রোডের একটি সড়ক, নূরজাহান রোড (মূল রাস্তা), ইকবাল রোডের ছয়টি সড়ক, স্যার সৈয়দ রোডের (আংশিক), তাজমহল রোডের দুটি সড়ক এবং টিক্কাপাড়া এলাকার দুটি সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। এর মধ্যে কোনো সড়কে কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কোনো সড়কে কাজ শেষে বালু ও ইটের টুকরা দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে।

একই চিত্র তেজগাঁওয়ের মনিপুরিপাড়া এলাকায়। ওই এলাকার কয়েকটি সড়কে দীর্ঘদিন থেকে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। দুই মাসেও কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। বিশেষ করে গাড়ি ও রিকশা চলাচল না করায় বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। এ রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার চান এলাকাবাসী। রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায়ও একই চিত্র দেখা যায়। সড়কটির ওপরে পয়ঃনালা সংস্কার কাজের জন্য রাখা হয়েছে পাইপ। এতে সরু হয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। এতে সড়কটিতে সার্বক্ষণিকই থাকছে যানজট। একই এলাকার কয়েকটি সড়কে ড্রেনেজ সংস্কার কাজ চলমান। দীর্ঘদিন কাজ চলায় বিপাকে পড়েছেন এ সড়ক ব্যবহারকারীরা। সড়কটি দ্রুতই সংস্কার চান এলাকাবাসী।

ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানানো হয়, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫-এর আওতাধীন ৯টি ওয়ার্ড এলাকায় ৩১টি প্যাকেজে সড়ক ও ফুটপাত সংস্কার এবং নালা নির্মাণের কাজ চলছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫২ কোটি টাকা। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেনেজ লাইন সংস্কার, ফুটপাত ও নালা নির্মাণের কাজ চলছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার কাজ চলছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। কাজ শেষ হলে এই ভোগান্তি আর থাকবে না। ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আর যে ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে না তাকে জরিমানা গুনতে হবে। এ নির্দেশনা তাদের দিয়ে রেখেছি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর