বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সীমান্তে কমেছে গুলির শব্দ আতঙ্ক কাটেনি

২৩ দিন পর খুলছে নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচ স্কুল, বিজিবি-কোস্টগার্ড-পুলিশের টহল জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে সংঘাত এখনো চলমান। তবে আগের মতো দিন-রাত গোলাগুলির বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসছে না। সোমবার দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের ওপারে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত রয়েছে। শোনা যায়নি গোলাগুলির শব্দ। তবে দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর গত শনিবার ও রবিবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপার থেকে আবারও গুলির শব্দ ভেসে আসে। গতকাল সকালেও ৩-৪ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত আর কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। এদিকে ২৩ দিন পর আজ থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আমাদের উখিয়া ও বান্দরবান প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে বন্ধ থাকা নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩ দিন পর আজ বুধবার থেকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বিদ্যালয়গুলো হলো- উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরত্ন চাকমা জানান, আজ থেকে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে।

তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে বুধবার থেকে আগের মতো ক্লাস চলবে। সীমান্তের পরিস্থিতি এখন ‘স্বাভাবিক’। তবে এখনো মাঝে মাঝে গুলির শব্দ পাওয়া যায় কিন্তু আগের মতো নয়। সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন পর কাজে ফিরতে শুরু করেছেন টেকনাফের সীমান্ত এলাকার কৃষকরা। তবে যে কোনো সময় আবারও পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কায় এখনো আতঙ্কে রয়েছেন তারা। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ?এখন গোলাগুলি হচ্ছে টেকনাফ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। এ জন্য আগের মতো গোলাগুলির বিকট শব্দ এপার থেকে শোনা যাচ্ছে না। এ জন্য কৃষকরাও কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। জেলেরা মাছ ধরতে যাচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সর্বশেষ গত সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাখাইন রাজ্যের নাইচাডং, বালুখালী, ডাবফাঁড়ি ও তোতারদিয়া এলাকায় গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সেখানে তারা হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন। এর পর গোলাগুলির আর কোনো শব্দ তারা পাননি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে। তবে সীমান্তে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল জোরদার রয়েছে। জানুয়ারি শেষের দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনা ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল ছুটে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু ঘটে। আহত হন কয়েকজন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারেও। জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনা ও সরকারি কর্মকর্তাসহ মিয়ানমারের তিন শতাধিক নাগরিক। সীমান্তে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচটি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বুধবার থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা প্রাথমিক বিদ্যালগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর