শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভোট দিবস কাল

ভোটার হতে যত ভোগান্তি

♦ অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করেও ইসির সাড়া মিলছে না ♦ ঝুলে আছে অনলাইনে ভোটার হওয়ার ১৮ লাখ ৪৮ হাজার আবেদন ♦ ভোটার হওয়ার ভোগান্তিতে প্রবাসীরাও ♦ ভাড়াটিয়ারা ভোটার হতে পারছেন না ঢাকায়

গোলাম রাব্বানী

ভোটার হতে যত ভোগান্তি

ঢাকার নন্দীপাড়ায় থাকেন আবিদ খান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আশা নিয়ে গত বছরের জুলাই ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন অনলাইনে। কিন্তু এখনো তিনি ভোটার হতে পারেননি। ঝুলে আছে তার অনলাইন আবেদন। ফলে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ হারান এই তরুণ ভোটার।

আবদুল্লাহ আল মমিন। ঢাকার ধামরাই এলাকার বাসিন্দা। করোনাকালীন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি নির্বাচন কমিশনের কোনো সাড়া পাননি। নির্বাচন কমিশনের অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। পরে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার হালনাগাদের সময় ভোটার হয়েছেন।

ইমরান হোসেন। চায়ের দোকান করে সংসার চালান। থাকেন ঢাকার মিরপুর এলাকায় একটি টিনশেড ভাড়া বাসায়। তিনি ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে দীর্ঘদিন ঘুরেছেন। কিন্তু ভোটার হতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট অফিস তাকে জানিয়ে দিয়েছে, ভাড়া বাসার ঠিকানায় ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি ভাড়া বাসার ঠিকানায় ভোটার হতে না পারায়, জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন না। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না। সন্তানদের স্কুলে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারছেন না। নিজের নামে কোনো মোবাইল সিম কিনতে পারছেন না। নাগরিকরা ভোটার হতে অনলাইনে আবেদন করেই শুধু ভোগান্তিতে পড়ছেন তা নয়; সরাসরি নির্বাচন কমিশনের থানা, উপজেলা অফিসে গিয়ে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। তবে প্রাবাসীদের ভোটার হওয়া আরও কঠিন। নির্বাচন কমিশনের অফিসে অফিসে ঘুরেও তারা ভোটার হতে পারছেন না। ভোগান্তির এই চিত্র শুধু ঢাকায় নয়; সারা দেশেই একই অবস্থা। নাগরিকরা ভোটার হতে না পারায় একদিকে ভোটদানের অধিকার হারাচ্ছেন। অন্যদিকে তারা নির্বাচনের প্রতিও আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

ঝুলে আছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার নতুন ভোটারের আবেদন : ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯১ জনের আবেদন ঝুলে আছে। তারা সবাই ভোটার হতে অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এ ছাড়া সৌদি আরব ২৫৪৫টি আবেদন, মালদ্বীপ ৫৭, সিঙ্গাপুর ৫০৫, আরব আমিরাত ১৩২৪৬, মালয়েশিয়া ৬২৪ ও ইউকে থেকে ৩৯০৮টিসহ অনলাইনে মোট ২৩ হাজার ৬১৫ জন প্রবাসী ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

অনলাইনে ১৮ লাখ ভোটার হওয়ার আবেদন ঝুলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবেদন এক জিনিস। নিষ্পত্তি না হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে। দেখা যায় চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র না দিয়েই অনলাইনে একটি আবেদন দাখিল করে দিল। সে ক্ষেত্রে আবেদন নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে। তার কাছে আবার তথ্য চাওয়া হয়, তারপর তথ্য দিলে সেই আবেদন নিষ্পত্তি হয়। না হলে আবেদন ঝুলে থাকে। এ রকম অনেক ঘটনা আছে। অনেক সময় দেখা যায় আবেদন আছে। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে পাওয়া যায় না। এটা এলাকার ওপর নির্ভর করে। কোন এলাকায় কত আবেদন ঝুলে আছে। তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। নতুন আবেদন আসতে থাকে। নিষ্পত্তি হতে থাকে। অনেক সময় যথাযথ তথ্য না পাওয়ার কারণে আবেদন ঝুলে থাকে।

ভোটার হওয়ার ভোগান্তিতে প্রবাসীরা : দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোটার নিবন্ধন, সংশোধনের কাজ স্বল্প সময়ে শেষ করার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিনিয়ত ভোটার হতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে চিঠি দিয়ে প্রবাসীদের স্পেশাল সার্ভিস দেওয়ার জন্য বলা আছে। এখন প্রবাসীদের প্রথমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হয়। সেজন্য প্রয়োজনীয় কাগজসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে আবেদনের ভিত্তিতে ছবি তুলে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনসহ আপলোড করলে কাজটি সম্পন্ন হয়। তবে এসব কাজ করতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোয় গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। মাসের পর মাস গেলেও সেখান থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয় না। ফলে পরিচয়পত্র পাওয়া যায় না। অল্প সময়ের জন্য দেশে এলেও শুধু এ পরিচয়পত্রের কাজেই প্রায় পুরো সময় চলে যায়।

কাল ভোটার দিবস : কাল ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস। ২০১৯ সালে এ দিবস ১ মার্চ পালন করা হলেও এর পর থেকে ২ মার্চ পালন করা হচ্ছে। এবারের ভোটার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিক তথ্যে ভোটার হব স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব’। এবারে ভোটার দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে বিকাল ৩টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করা হবে। এরপর নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে হবে আলোচনা সভা; শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম ঘোষণা; পদক প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে আগামীকাল ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে হালনাগাদ ভোটারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।

এবারে নতুনদের মিলিয়ে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ১৭ লাখের বেশি। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি যারা ভোট দেওয়ার যোগ্য হয়েছেন, তাদের তথ্য হালনাগাদ করে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার হালনাগাদে যুক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৮৬ হাজার নতুন নাম। তাতে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ১৭ লাখের বেশি।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর